ইউনিয়নপরিষদকে আরও শক্তিশালী করতে নিয়োগ পাচ্ছে সাড়ে চার হাজার হিসাবরক্ষক

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: ইউনিয়নপরিষদকে (ইউপি) আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অফিস কার্যক্রমসুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মোট সাড়ে চার হাজারহিসাবরক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাজস্ব খাতের আওতায় আনারচিন্তাভাবনা চলছে ইউপি সচিবদের। প্রক্রিয়া চলছে দফাদার ও গ্রাম পুলিশেরবেতন বাড়ানোরও। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

দশমজাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই বর্তমান সরকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকেআরও কার্যকর ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়। গত ৭ এপ্রিল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিতসচিবসভায় সচিবদের উদ্দেশেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত নির্দেশনাদেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যেনেয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। এর মধ্যে জনপ্রিয় ও দক্ষ ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যানদের দেয়া হবে সম্মাননা ও পুরস্কার। পাশাপাশি কমানো হবে ব্যর্থ ওঅদক্ষ চেয়ারম্যানদের ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্দ। এ ধরনের ইউনিয়নে অর্থ ছাড়েরব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। গ্রাম আদালতকে আরও শক্তিশালী করেপ্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টাও চলছে। ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনাহয়েছে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদকে। এখন ইউনিয়ন ইনফরমেশন সার্ভিসের মাধ্যমেসেবা পাচ্ছেন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। ফলে বেড়েছে ইউনিয়ন পরিষদেরকার্যপরিধি।

এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও দক্ষভাবেপরিচালনার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে একজন করে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিয়োগদেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবও লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের পরিচালক কেএম মোজাম্মেল হক। তিনিবলেন, ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ দুই অর্থবছরে হিসাবরক্ষণ পদে দুই হাজার লোক নিয়োগদেয়া হবে। বাকি পদেও পর্যায়ক্রমে লোক নিয়োগ করা হবে।

প্রসঙ্গত, বিদ্যমানআইনে বলা আছে- প্রতিটি ইউপিতে একজন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরথাকবেন, যারা সরকার বা সরকার কর্তৃক কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিযুক্তহবেন। আইনে থাকলেও এখনও এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। হিসাবরক্ষকের প্রয়োজনীয়তাউল্লেখ করে গত বছরের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিরা বলেছিলেন, সরকারেরউন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে ইউনিয়ন পরিষদকেবহুমাত্রিক কাজ করতে হয়। মাত্র একজন সচিবের পক্ষে উন্নয়নমূলক বহুমাত্রিককার্যক্রম সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন বলেও ডিসিরা মন্তব্য করেন।

জানাগেছে, সারাদেশে চার হাজার ৫৭০টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এসব ইউপির যাবতীয়কাজকর্ম দেখভাল করতে সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র একজন সচিব রয়েছেন। যার বেতনের৭৫ শতাংশ সরকারের অনুদান ও ২৫ শতাংশ বেতন ইউপির তহবিল থেকে দেয়া হয়।ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের চাকরিও রাজস্ব খাতের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা চলছে।সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি দাবিনামা জমা দিয়েছেবাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ সেক্রেটারি সমিতি (বাপসা)। বাপসার সভাপতি মো.সোহেলুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনেরজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শুনেছি অর্থ মন্ত্রণালয়ও তাতে সম্মতিদিয়েছে।

এদিকে গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে বলেজানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও লোকাল গভর্ন্যান্সসাপোর্ট প্রজেক্টের পরিচালক কেএম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, অর্থের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সরকার গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা বাড়ানোরচেষ্টা করছে। তারা যে বেতন পায় তা দিয়ে বর্তমান বাজারে জীবন ধারণ করা প্রায়অসম্ভব। তাদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায়রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে একজন দফাদার ও নয়জন মহল্লাদাররয়েছেন। তারা সবাই গ্রাম পুলিশ নামে পরিচিত। বর্তমানে দফাদার ও মহল্লাদাররাইউপি থেকে যথাক্রমে দু হাজার ১০০ ও এক হাজার ৯০০ টাকা পেয়ে থাকেন। এরমধ্যে সরকার দেয় দফাদারদের এক হাজার ৩০০ এবং মহল্লাদারদের এক হাজার ১০০টাকা। তারা চাকরি শেষে কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না। গত বছরের জেলা প্রশাসকসম্মেলনে ডিসিরা গ্রাম পুলিশের অবসরে যাওয়ার পর চাকরির মেয়াদের ওপর ভিত্তিকরে অবসরকালীন থোক ভাতা দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন। অন্যদিকে গ্রাম পুলিশকেসরকারি কর্মচারীর ন্যায় ৪র্থ শ্রেণির স্কেল দেয়ার বিষয়ে অর্থ বিভাগকেঅনুরোধ করা হলে তারা বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় স্থানীয় সরকার বিভাগে।বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।