ইউজিসি কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দাবির মধ্যেই আজ ফল প্রকাশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার র‌্যাব শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছে। এদিকে প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসের অভিযোগ এনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ প্রকাশ করা হলে আগামীকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলের কৃতী শিক্ষার্থীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হবে। ভর্তি পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকে ০১৭১১ ৩৯৭৩৯০ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, শনিবার বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও সরকারি দফতরে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রযুক্তির সাহায্যে পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহসহ উত্তরপত্রে জালিয়াতির অভিযোগে তিনজনকে শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইউজিসি কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওমর সিরাজ ছাড়া অপর দুজন হলেন জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ভান্ডাররক্ষক রেজাউল করিম ও তার সহযোগী ঈশান ইমতিয়াজ। শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ জানায়, র‌্যাব-৪’র এসআই আলীমুর রাজী বাদী হয়ে শনিবার বিকালে মামলা করেন। র‌্যাব-৪’র অধিনায়ক খন্দকার লুৎফুল কবির জানান, গ্রেফতারকৃতদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।

বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রহিত খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। এরই মধ্যে প্রশ্নসহ র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সহকারী পরিচালকসহ কয়েকজন কর্মচারী। পরীক্ষার আগের দিন রাতে ফেসবুকসহ হোয়াটস আপ, ভাইবারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের কপি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ারও অভিযোগ উঠেছে।

এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার নেয়ার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। পরে ওই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে সদর রোডে একটি মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা।

‘প্রশ্ন গেলে বাহিরে, ডাক্তার হবে হাতুড়ে’- লেখা ব্যানার নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মুখপাত্র তাহমিদ হাসান, বিপ্লব দে, নিরুপন প্রাঙ্গণ, তারিফ বিন সালেহ, উত্তম কুমার ও রিয়াদ।

সভায় বক্তারা বলেন, পরীক্ষার আগমুহূর্তে ওয়াটস অ্যাপ ও ভাইবারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে হুবহু চলে আসে। ২০০৬ সালের পর এবার এত বড় মাত্রায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে।

ময়মনসিংহ শহরের ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নোমান, হৃদয়, হাবিব, জাহিদ। তারা বলেন, তাদের সবার জীবনের স্বপ্ন ছিলো মেডিকেলে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে বড় ডাক্তার হবে এবং যারা মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু সবাই নিশ্চই মেধাবী শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষায় সত্যিকার মেধা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে যদি তারা ভর্তি হতে না পারে, তাহলে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু যেভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মেধাহীন শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে পড়াশোনা করে ডাক্তার হবে তাদের কাছে দেশ এবং সাধারণ মানুষ কী আশা করতে পারে। তাদের দাবি, অবিলম্বে এ ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হোক।