আসছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ : জীবননগরে দুজনের মৃত্যু

অব্যাহত ঘন কুয়াশা আর কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার: ‘মাঘের জারে বাঘ কাঁন্দে’ এই প্রবাদ বাক্যটিই পৌষের শেষদিকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে গোটাদেশের মানুষ। অব্যাহত ঘন কুয়াশা আর কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাড় কাঁপানো শীতে মানুষের পাশাপাশি কাবু হয়ে পড়েছে গবাদী পশু-পাখিও। সন্ধ্যার পরপরই কুয়াশার চাঁদরে বন্দি হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে নিয়ন্ত্রিত গতিতে। প্রকৃতিতে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে হঠাৎ নেমে এসেছে কনকনে শীত। মাঘ মাসে নয়; এবার যেন পৌষেই বাঘ কাপানো ঠাণ্ডা নেমেছে। চুয়াডাঙ্গাসহ গোটা দেশ কাঁপছে শীতে। প্রতিদিন নামছে তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশা বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের মাত্রা। উত্তর দিক থেকে আসা হুল ফুটানো শীতল বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডা দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আগেভাগে শুরু হওয়ার পর এখন ধেয়ে আসছে রাজধানী ঢাকাসহ মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের দিকে। দেশের প্রায় সব জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।
শীত মরসুমের শুরুতে সে রকম একটা শীত অনুভূত না হলেও পৌষের শেষ দিকে তা জেঁকে বসতে শুরু করেছে। সেইসাথে বইছে কনকনে হিমেল হাওয়া, ঘন কুয়াশা আর সূর্যের লুকোচুরি খেলা। বিরূপ আবহাওয়ায় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হাড় কাঁপানো শীতের হাত থেকে বাঁচতে মানুষজন তাদের শেষ গরম কাপড়টিও শরীরে জড়িয়েছে। তবে সামান্য এক টুকরো গরম কাপড় দিয়ে বেঁচে থাকা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। হিমেল হাওয়া, শিরশির ঠাণ্ডার আক্রমণে মানুষের বেঁচে থাকা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে।
গতকাল শুক্রবার শীতলতম দিন ছিলো যশোরে। সেখানে তাপমাত্রা ছিলো ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্র ছিলো ৮ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে হঠাৎ জোরেশোরে শীতল বাতাস বইতে শুরু করায় ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা বড় করুণ। ঠাণ্ডার কামড় সহ্য করতে না পেরে খড়-কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরমের চেষ্টা করছেন দরিদ্ররা। বিশেষ করে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল অবস্থা ছিন্নমূল মানুষের। বর্তমানে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টাই আকাশ থাকে মেঘ ও কুয়াশাচ্ছন্ন। বিকেল থেকে পরদিন আধাবেলা পর্যন্ত থাকছে দাপুটে শীত। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ঝরছে টিপ টিপ করে। কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনগুলো দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। পাশাপাশি ট্রেনগুলো অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাচল করছে। সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষ নেহায়েত গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া ঘর থেকে বেরুচ্ছেন না। দিনের বেলায় সূর্য কিছু সময়ের জন্য দেখা গেলেও তা যেন মোটেও উত্তাপ ছড়াতে পারছে না। তীব্র শীতের কারণে দরিদ্র মানুষ কাজে যেতে না পেরে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজন দারুণ অসহায় হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা, আলুসহ বিভিন্ন ফসল। ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা দিয়েছে। প্রচ- শীতের কারণে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন শীতজনিত রোগ-বালাই। হাসপাতালে বেড়েছে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া, আমাশয়, হাঁপানি পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার অবধি শীতের তীব্রতা কমবে না। তাপমাত্রা ক্রমশ হ্রাস পাবে। এ সময় রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলিসিয়াস নেমে যাবে। এ মাসেই তিনটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা আছে। জানুয়ারিতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি (৬ ডিগ্রি-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস), একটি তীব্র (৪ ডিগ্রি-৬ ডিগ্রি সে.) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ, অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদুু (৮ ডিগ্রি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ফলে অস্থায়ীভাবে আকাশ মেঘলা থাকছে। উঁকি দিতে পারছে না সূর্য। ঘন কুয়াশায় দৃশ্যমানতা নেমে এসেছে ৫০ মিটারে। বিমান, নৌ পরিসেবা ব্যাহত হচ্ছে। শক্তিশালী ঝঞ্ঝার হাত ধরে এক দফা বৃষ্টি হয়ে গেলে কুয়াশা এত ঘন হতে পারত না। শুক্রবার দেশের অন্তত ২০ জেলায় তাপমাত্রা ছিলো ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে।
আবহাওয়া বিজ্ঞানী রাশেদ চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধির দীর্ঘ মেয়াদী গড় থেকে বর্তমান সময়ের শীত হ্রাস পাচ্ছে এটা ঠিক। তবে শীতকালীন ‘লা নিনার’ কারণে এবার বাংলাদেশের কোথাও কোথাও কিছুদিন কিছুটা বেশি মাত্রায় ঠাণ্ডাও পড়তে পারে। এবারকার ঠাণ্ডাটা অন্যান্য বছরের চেয়ে একটু বেশি ব্যতিক্রম। আমাদের দেশে মূলত: ডিসেম্বর থেকে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু করে আবার কিছুদিন পর তা হ্রাস পেয়ে গেছে এমন উদাহরণ রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। লঘুচাপের প্রভাবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের যেসব অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা আশপাশের এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, টাঙ্গাইল, নেত্রোকোনা, শ্রীমঙ্গল, বরিশাল, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, নওগাঁ দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ চলমান রয়েছে। উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় রাতের তাপমাত্রা আরও কমবে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা বিভাগেও। শৈত্যপ্রবাহের কারণে সারাদেশের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমবে। শুক্রবার ঢাকায় তাপমাত্রা ছিলো ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ৮, দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৪, ঈশ্বরদী ৮, রাজশাহী ৮ দশমিক ৬, ডিমলা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গত তিনদিন ধরে হাঁড় কাঁপানো তীব্র শীতে কাঁপছে জীবননগরবাসী। তীব্র শীতের মধ্যে শীতজনিত রোগ কোল্ডস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা শহরের বসুতিপাড়ার রওশন আলী (৫৮) ও ধোপাখালীর রকিম উদ্দিন (৬২) মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে দুইদিন পর গতকাল শুক্রবার সূর্যের আলোর দেখা মিললেও হিমেল হাওয়ার কারণে হাড়কাঁপানো তীব্র শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। সেই সাথে সন্ধ্যা নামার পরপরই ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে পড়ছে পুরো এলাকা। সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকায় যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। হাড় কাঁপানো শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু-পাখিও কাবু হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে উপজেলায় কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। শীতের তীব্রতার কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হতদরিদ্র খেটে খাওয়া দিনমজুর। শীতবস্ত্রের অভাবে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, প্রচণ্ড শীতে যবুথবু আলমডাঙ্গার হতদরিদ্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। বিগত কয়েকদিনের মতো গতকালও তিনি শীতার্ত হতদরিদ্রের মাঝে তিনি কম্বল বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর শহরের আনন্দধাম, হাউসপুর হঠাৎপাড়া ও এক্সেঞ্জপাড়ার অলি-গলিতে ঘুরে ঘুরে কম্বল বিতরণ করেন উপজেলা নিবার্হী অফিসার রাহাত মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, প্রেসক্লাব সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টুসহ কর্মচারীবৃন্দ। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নানসহ কর্মকর্তাবৃন্দ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মাঘ মাস আসতে আরও এক সপ্তা বাকি। অথচ মেহেরপুরে জেঁকে বসেছে শীত। শুরু হয়েছে মাঝারি আকারের শৈত্যপ্রবাহ। গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। প্রচ- শীতে সবচাইতে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। কাজ না পেয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। শীতের প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। মেহেরপুরে গত কয়েক দিনে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি। এদিন চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিদিনই দুপুরের পর সূর্যের দেখা মিলছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে গিয়ে কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছে। এদিকে তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা, ব্রঙ্কাইটিস ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বড়রা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে। বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শয্যা না পেয়ে অনেকের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের দিনমজুর এখলাছ জানান, গত কয়েকদিনের শীতে তাদের আয়েও ভাটা পড়েছে। কনকনে শীতে কাজের সন্ধানে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। মেহেরপুর গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ জানান, কয়েকদিন আগে তার এক বছর বয়সী শিশু ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। শয্যা না পাওয়ায় বারান্দায় রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় অন্যরোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কাও রয়েছে। একই অবস্থা মা ও শিশু ওয়ার্ডে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক আবু মোহাম্মদ রাজু জানান, শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে শিশুদের গরমস্থানে রাখতে হবে। পাশপাশি গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখা প্রয়োজন। খাওয়ার আগে ও পরে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এছাড়াও সমস্যা দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হবার পরামর্শ চিকিৎসকদের।