আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করবো : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে যে নির্বাচন হবে, তা যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় আলোচনা করে তার একটা পথ বের করবো। আমরা চাই, মানুষ মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে। যার যার প্রতিনিধি সে বেছে নেবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যতক্ষণ শ্বাস আছে, ততক্ষণ দেশের ও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে যাবো। সম্প্রতি বিচার বিভাগের চলমান ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে দেশে বিচারপতিদের নিয়ে নানা ধরনের খেলা হয়েছে। তিনি বলেন, এমনও হয়েছে যে, প্রধান বিচারপতির এজলাসে বসে আছেন তাকে পত্রপাঠ বিদায় জানানো হয়েছে, অথচ তিনি (বিচারপতি) কিছুই জানেন না। শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজে ফোন করেছি। ফোন ধরার পর যে ঝাড়িটারি মারলো, তা বলতে চাই না। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি। আমি বলেছিলাম, সর্বদলীয় সরকার করব, আপনি (খালেদা জিয়া) যে মন্ত্রণালয় চান তা দিতে রাজি আছি। কিন্তু নির্বাচনে এলো না। নির্বাচনে না এসে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা শুরু করল। তবে জনগণ তাদের রুখে দিয়েছে। নির্বাচনটা হলো, আমরা আবার ক্ষমতায় এলাম। আর সে জন্যই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটা সম্মানজনক অবস্থানে আছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংসের পাশাপাশি বিচার অঙ্গনেও নানা খেলা খেলেছেন। বিএনপির শাসনামলেই বিচারপতিদের বয়স বাড়ানো-কমানো হয়েছে। জোর করে বিদায় দেয়া হয়েছে। আবার কাউকে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা গেছে, হুটহাট করে বিচারপতিদের বিদায় জানানো হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদও এক বিচারপতিকে বঙ্গভবনে চা খাওয়ার দাওয়াতে ডেকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির শাসনামলে একবার প্রধান বিচারপতির বয়স ৬২ থেকে ৬৫ আবার ৬৫ থেকে ৬২-তে আনা হয়। আর সর্বশেষ তা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করা হয় যাতে তাদের দলের সাবেক নেতা প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রধান বিচারপতি সবেমাত্র অবসরে গেছেন, তিনি উপদেষ্টা হবেন তাই বিএনপি তাদের সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক কেএম হাসানকে প্রধান বিচারপতি বানাল এবং বিচারপতিদের অবসরের বয়সও বাড়াল। চক্রান্ত করল যাতে কেএম হাসান প্রধান উপদেষ্টা হয়ে ভোট চুরির সুযোগ করে দেন। আমরা মজাজোট করি। আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ দেয়া ১০ বিচারপতিকে বিএনপি স্থায়ী করেনি বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন। সরকার প্রধান বলেন, আগামীতে যে জাতীয় নির্বাচন হবে, সেটা যেন অবাধ নিরপেক্ষ হয়, আমরা সেটাই চাই। ভোটাধিকার জনগণের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। তা যেন ভবিষ্যতে আর কেউ কেড়ে নিতে না পারে, সেটা সুরক্ষিত করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়াই আমাদের সরকারের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যটা বাস্তবায়নের জন্য যা যা করণীয় আমরা সেটাই করতে চাই। তিনি বলেন, অতীতে এ দেশে নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২০০১-এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া ভোটের দিন একটি আসনে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে আর্মির গাড়িতে তুলে নানা জায়গায় ঘুরিয়ে ভোটাররা যাতে আওয়ামী লীগকে ভোট না দেয় সেই মেসেজ দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন দলটির সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রস্তাবেই আজ নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের ব্যবহার থেকে শুরু করে ছবিসহ ভোটার তালিকা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম আছে, সেখানে একজন একটি ভোটই দিতে পারবে। সেই ব্যবস্থাটাও যাতে এখানে চালু হয় আমরা সেই প্রস্তাবও দিয়েছি। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কিছু স্থানীয় নির্বাচনেও ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার হয়েছে। এতে দেখা গেছে, মানুষ ভোট দিতে পারে। আমরা চাই সেই সিস্টেম আসুক। আওয়ামী লীগের একটাই কথা, মানুষ স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও নিঃশঙ্কচিত্তে তার ভোটের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করুক।

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীও জয়লাভ করেছে। চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই বিএনপি জয়লাভ করেছে, আমরা তো বাধা দিইনি। আমরা তো ফল বদলাইনি। আমরা কখনও কোনো মানুষের ওপর জুলুম করিনি। যার যা ইচ্ছা, স্বাধীনভাবে সে যাকে চাইবে তাকেই পছন্দ করবে, ঠিক সেই কাজটিই আমরা করতে চাই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভার বিষয়ে দলীয় প্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে কি কি প্রস্তাব দেয়া হবে তা নিয়েই সবার সঙ্গে আলোচনা করব। গণতন্ত্রের ভিত্তি কিভাবে মজবুত করা যায় সেজন্যই সবাইকে ডাকা।  নির্বাচনের প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠু হয় সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। আমি চেয়েছি সবাই বসে আলোচনা করলে আমাদের একটা ভালো টিম তৈরি হবে। তিনি বলেন, আমাদের একটাই কথা জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। ইতিমধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, আমরা জানি যে, পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান, এটাও আমাদের বড় একটা অর্জন।