আলমসাধু কেড়ে নিলো সম্ভাবনাময়ী যুবকের প্রাণ : সেবক সেজে মোবাইলফোন চুরি

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: শ্যালোইঞ্জিন চালিত ঘাতক আলমসাধুর ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দামুড়হুদা উজিরপুরের আব্দুল হান্নান (২৫) নিহত হয়েছেন। অনার্স পাস আব্দুল হান্নান চাকরির তদবির শেষে ফেরার পথে আলুকদিয়ার জ্যোতি বিস্কুটের অদূরে কাঠ বহন করা আলমসাধুর ধাক্কায় আছড়ে পড়েন। তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় আলমসাধুর চাকা। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সম্ভাবনাময়ী হান্নান। গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আব্দুল হান্নান নিহত হলে উদ্ধারের নামে অসাধু ব্যক্তি শুরু করে লুটপাট। পকেটে থাকা মোবাইলফোনসহ নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় পকেটে থাকা মানিব্যাগসহ কাগজপত্রও চুরি করে। এ কারণে লাশের পরিচয় উন্মোচনে জটিলতা দেখা দেয়। মোবাইলফোনসহ মানিব্যাগ চুরির ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় সচেতনমহলে ক্ষোভ দানা বাধে। রক্তাক্ত নিথর দেহ ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুটি আলমসাধু আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। লাশ দেখে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী নাসিমা তার বাড়িতে খবর দেন। নাসিমা খাতুনের কারণেই লাশের পরিচয় মেলে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর খাসপাড়ার লষ্কর মণ্ডলের ছেলে আব্দুল হান্নান চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গত বছর সে মাস্টার পাস করে চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি করছিলো। গতকাল শনিবার দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সে আলুকদিয়ার এক ব্যক্তির সাথে দেখা করার জন্য ডিসকভারি মোটরসাইকেলযোগে রওনা হয়। সে ছিলো অবিবাহিত। ৪ ভাই দু বোনের মধ্যে আব্দুল হান্নান ছিলো ৫ম। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলেছেন, আলুকদিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে যাচ্ছিলো মোটরসাইকেল আরোহী। গতি তেমন একটা ছিলো না। দুটি আলমসাধু বড় বড় গাছের গুঁড়ি নিয়ে একই দিকে যাচ্ছিলো। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের হাতিকাটা-আলুকদিয়ার মধ্যবর্তী জ্যোতি বিস্কুট ফ্যাক্টরির সামনে মোটরসাইকেলটি একটি আলমসাধু অতিক্রম করে। সামনে গাড়ি দেখে মোটরসাইকেলটি দুটি আলমসাধুর মাঝে যায়। এ সময় পেছন থেকে একটি আলমসাধু ধাক্কা দেয়। আছড়ে পড়েন আরোহী। পেছনের ওই আলমসাধুটিই চাকায় মাথা পিষ্ট করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী। এ সময় অনেকেই ছুটে যায়। নাড়াচাড়া করে। পরক্ষণেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি মোবাইলফোনসহ কাছে থাকা মানিব্যাগ। খবর দেয়া হয় দৌলাতদিয়াড়স্থ ফায়ার স্টেশনে। ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা নিথর দেহ উদ্ধার করেন। একই সাথে স্থানীয়রা আলমসাধু দুটিও পুলিশে দেয়ার জন্য ফায়ার স্টেশনের সদস্যদের অনুরোধ করেন। শহীদ হাসান চত্বর পর্যন্ত আলমসাধু দুটি পৌঁছে দেন ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা। হাসপাতালে নেয়ার পর পরিচয় জানার জন্যই মূলত মোবাইলফোনটির খোঁজ করতে থাকেন সকলে। তা না পেয়ে হতাশ হন উপস্থিত সচেতনমহল। কে নিলো? কতোটা অমানবিক না হলে এমনটি করতে পারে? এসব প্রশ্ন তুলে যখন সমালোচনার ঝড় ওঠে, তখনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী নাসিমা কৌতুহল বশে লাশ দেখতে গিয়ে চমকে ওঠেন। তিনিই বলেন, এ লাশ তো আমাদের গ্রামের তথা উজিরপুরের। তিনি হান্নানের পিতাকে খবর দেন। বিকেলে নিকটজনেরা হাসপাতালে হাজির হন। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমোদন নেন। লাশ নিজ গ্রামে নেয়া হলে নিকটজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গতরাতেই দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। আলমসাধু দুটি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আটক ছিলো।