আলমসাধুর ধাকায় শিশু নিহত : অবৈধযানের মালিক চালকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার গোপীবল্লভপুর-শ্যামপুর সড়কে বিদ্যালয়ের অদূরে রক্তপাত : উপযুক্ত ধারায় মামলা নিতে পুলিশি পদক্ষেপ 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযানের অবৈধ আনাড়ি চালকের কারণে শিশুর প্রাণহানীতে এবার হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। অসংখ্য প্রাণহানীর পর অবশেষে গতকাল শনিবার আলমডাঙ্গা থানায় গোপীবল্লভপুরের মাসুদ আলী বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তার শিশু কন্যা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী নীলা খাতুনকে গতকাল শনিবার বিকেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আলমসাধু চালকের চাকায় পিষ্ট করে মারা হয়। পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর গ্রামের ফুফুবাড়ি থেকে নিজ বাড়ি ফেরার পথে অবৈধযানের ধাক্কায় আছড়ে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণহারায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, ঘাতক আলমসাধুর চালক ছেলুন আলী নিজে গাড়িতে বসে থেকে দুর্লোভপুরের উঠতি বয়সী কিশোর লাল মিয়াকে আলমসাধু চালাতে দেয়। ওই কিশোর শ্যালোইঞ্জিনচালিত আলমসাধু বেপরোয়গতিতে চালাতে গেলে সামনে পড়া শিশু নীলাকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই শিশু নীলা মারা যায়। আলমসাধু চালক ও সহযোগী দুজনই আত্মগোপন করেছে। আলমডাঙ্গা থাকায় এদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। একেতো শ্যালোইঞ্জিনচালিত আলমসাধু অবৈধ, তার ওপর আনাড়ি চালক। দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের অপমৃত্যুর ঘটনাকে অনিচ্ছাকৃত হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি উঠলেও তাতে তেমন কারো সাড়া মেলেনি। অবশেষে আলমডাঙ্গা থানায় এ মামলা হওয়ায় অনেকেরই আশাবাদ, এবার হয়তো অবৈধযানের কারণে প্রাণহানী হ্রাস পাবে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের পর অবৈধ যান দুর্ঘটনা রোধে এ ধরণের মামলা নিয়ে উপযুক্ত শাস্তির লক্ষে বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার পর এবার মামলা রুজুর ঘটনাকে অনেকেই ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের গোপীবল্লভপুর গ্রামের মাসুদ আলীর ৮ বছরের শিশুকন্যা নীলা খাতুন শ্যামপুর-গোপীবল্লভপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। গতকাল বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষে দুপুর ১টার দিকে বাড়ি ফিরে। মা তাকে খেতে দেন। পরে কিছু জিনিসপত্র দিয়ে সেগুলো তার ফুফুর শ্বশুরবাড়ি পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর গ্রামে পৌঁছে দিতে পাঠায়। নীলা জিনিসপত্রগুলো ফুফুবাড়ি পৌঁছে দিয়ে বিকেল ৩টার দিকে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে শ্যামপুর-গোপীবল্লভপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছুলে পেছন দিক থেকে একটি দ্রুতগামী আলমসাধু তাকে ধাক্কা দেয়। এতে সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে সে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীসূত্র জানায়, ওই ঘাতক আলমসাধুর চালাচ্ছিলেন দুর্লোভপুরের আলম হোসেনের ১৪ বছরের উঠতি বয়সী কিশোর ছেলে লাল মিয়া। দুর্ঘটনার সময় আলমসাধুর মালিক একই গ্রামের ইসলামের ছেলে সেলুন আলী গাড়িতে বসে ছিলেন। তিনি নিজে না চালিয়ে অল্প বয়সী কিশোরকে দিয়ে আলমসাধু চালানোর কারণে এ প্রাণহানী ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দুর্ঘটনার পর  ছেলুন আলী ও লাল মিয়া দুজনই আলমসাধু ফেলে পালিয়ে যায়।

এদিকে, এলাকাবাসীসূত্রে জানা যায়, এ হত্যাকাণ্ড সালিস বৈঠকে বিনিময়ে টাকার বিনিময়ে মিটিয়ে ফেলতে একট মহল সক্রীয় হয়ে উঠে। তারা টাকার অংকও নির্ধারণ করে ফেলেন। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের কারণে তাদের সে তৎপরতা সফল হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আজ ভোরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ঘাতক আলমসাধুটি উদ্ধার করে থানায় নিয়েছে। মাসুদ আলীর ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে নিহত নীলা খাতুন ছিলো ৩য় সন্তান। গতকাল আকস্মিক তার মৃত্যুর সংবাদে মা-বাপ, ভাই-বোনসহ নিকটতম আত্মীয়দের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠে।

গতকাল রাতে নিহত শিশুকন্যার পিতা মাসুদ আলী বাদী হয়ে ছেলুন আলী ও লাল মিয়াকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।