আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সীমাহীন দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর দাখিলা-পর্চা ও খারিজবিহীন রেজিস্ট্রি বন্ধ : রেজিস্ট্রি মাত্র ২০টি

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সীমাহীন দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় দাখিলা-পর্চা ও খারিজবিহীন রেজিস্ট্রি আপাতত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার।  গতকাল দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে মাত্র ২০টি। এমন সংবাদ দিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, অনিরুদ্ধ দুর্নীতির কারণে খাজাবারার দরবার খ্যাত আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়ম করে জমি রেজিস্ট্রি করতে ইচ্ছুকদের গতকাল মঙ্গলবার নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। বরাবরের মতো গতকাল খারিজবিহীন, দাখিলা-পর্চা ছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করতে রাজি হননি সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রব। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রব ও তার মহুরার দুলালের সীমাহীন দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হলে আপাতত তিনি আর অনিয়ম করে জমি রেজিস্ট্রি করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। গতকাল তিনি অফিস টাইমের বেশ দেরিতে উপস্থিত হয়ে দলিল লেখকদের এ বিষয়টি অবগত করান। ফলে গতকাল দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে মাত্র ২০টি। যেখানে একদিনে গড়ে ১শ’ ৩০টি দলিল রেজিস্ট্রি হতো, সেখানে গতকাল মাত্র ২০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। বেশির ভাগ দলিল লেখককে তিনি ফেরত দিয়েছেন খারিজবিহীন অথবা দাখিলা-পর্চা না থাকার অভিযোগে।

উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রব জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ‘হায়ার ভ্যালু’ নামে নতুন করে ঘুষের প্রচলন করেছেন। জমির মূল্য প্রতি লাখের বিপরীতে তিনি স্ব আবিস্কৃত হায়ার ভ্যালু নেন ৪০০ টাকা হারে। এতে শুধু জমি ক্রেতা-বিক্রেতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, সেই সাথে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। হায়ার ভ্যালু দেয়ার ভয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা জমির প্রকৃত মূল্য গোপন করে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে দলিল করছেন। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর পকেট ভারি হচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রারের। আইনগতভাবে দলিলে টিপসই দিতে কোনো টাকা নেয়ার বিধান না থাকলেও কখনও কখনও ১০ টাকা আবার কখনও ২০ টাকা করে গ্রহণের প্রচলন ইতোপূর্বে ছিলো। কিন্তু আব্দুর রব সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করার পর টিপসই বাবদ নজরানা এক লাফে ৩ গুণ বৃদ্ধি করে বর্তমানে ৬০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। দেদারছে খারিজবিহীন জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। সপ্তায় ২ দিন জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি- প্রতিদিন গড়ে ১৪০টি করে দলিল সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ৩০-৩৫ ভাগই খারিজবিহীন বলে দাবি করেছেন একাধিক ডিড রাইটার। তবে এ চরম অন্যায় এমনিতে হয় না। খারিজবিহীন দলিল প্রতি সাব রেজিস্ট্রার গুণে গুণে ২ হাজার ৮০০ টাকা করে পকেটস্ত করেন। দাখিলা না থাকলে মোটেও সমস্যা নেই। এর জন্য গুণতে হয় ২০০ করে টাকা। এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে সরবরাহ করা পর্চা হলে তার ভাগ্যে জোটে ‘লোকাল পর্চা’ অপবাদ। এ অপবাদ ঘোচাতে চাহিবামাত্র সাব-রেজিস্ট্রারকে ৫০০ করে টাকা দিতে বাধ্য থাকতে হয়। আরও আছে জমির শ্রেণি সংক্রান্ত দুর্নীতি। এমন আরও অনেক খাতওয়ারি সাব-রেজিস্ট্রার বাবুকে নজরানা দিয়ে খুশি করতেই বর্তমানে আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস খাজা বাবার দরবার বনে গেছে বলে ডিড রাইটারসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই মন্তব্য করেছেন।