আলমডাঙ্গা শহরে বেশিরভাগ ফার্মেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপত্রে নামসর্বস্ব কোম্পানির ওষুধ গচিয়ে দেয়ার অভিযোগ

শরিফুল ইসলাম রোকন/ আতিক বিশ্বাস: ডাক্তার রোগীর ব্যবস্থাপত্রে শীর্ষ ১০ কোম্পানির ওষুধ লিখলেও আলমডাঙ্গা শহরে বেশিরভাগ ফার্মেসিগুলো নামসর্বস্ব কোম্পানির ওষুধ গচিয়ে দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে একদিকে যেমন রোগী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, অন্যদিকে ডাক্তারদের সুখ্যাতি বিনষ্ট হচ্ছে। ফার্মেসিগুলোর সেলসম্যানদের ম্যানেজ করে নামসর্বস্ব ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এই অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা শহরে মোট ৬৫টি ফার্মেসি রয়েছে। এই  ফার্মেসিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে  যে, রোগীর ব্যবস্থাপত্রে শীর্ষ ১০ কোম্পানির ওষুধ লেখা থাকলেও রোগী নিজে কিংবা স্বজনেরা ওষুধ কিনতে  গেলে ফার্মেসির পক্ষ থেকে অন্য কোম্পানির ওষুধ গচিয়ে দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন অমার্জনীয় অপরাধ করা হয় বলে জানা যায়। অভিযোগকারীরা জানান, অধিক লাভের জন্যই সাধারণত ফার্মেসির  সেলসম্যানরা এ অপকর্ম করে থাকে। নামসর্বস্ব ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা দোকানের সেলসম্যানদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করিয়ে নেয়।

এতে একদিকে যেমন রোগী ও তার পরিবার অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হন, অন্যদিকে চিকিৎসকের সুখ্যাতি নষ্ট হয়ে থাকে। কয়েকজন চিকিৎসকের নিকট কথা বলে জানা যায়, সাধারণত এন্টিবায়োটিক, মাল্টিভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-৩, এন্টি আলসার ড্রাগ ইত্যাদি ওষুধের এক্ষেত্রে এই অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়। শহরের অধিকাংশ ওষুধের দোকান ও গ্রামের প্রায় সকল ওষুধের দোকানে এমনটি হরহামেশা ঘটে থাকে। ওষুধ সম্পর্কে রোগী কিংবা তার স্বজনদের তেমন ধারণা না থাকায় ওষুধব্যবসায়ীরা খুব সহজেই তাদেরকে প্রতারিত করতে পারে।

খুলনা কেএমসি হাসপাতালের সাবেক সুপারিন্টেনডেন্ট ডাক্তার গোলাম মোস্তফা বলেন, নিম্নমানের ওষুধ  সেবনে রোগীর আরোগ্যের পরিবর্তে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় ও নিম্নমানের এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করায় ওই এন্টিবায়োটিক দেহে রেজিস্টেন্স হয়ে হায়। ফলে পরবর্তীতে ওই রোগীর দেহে এন্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না। এমনকি ডাক্তার ব্যবস্থাপত্রে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের কথা লিখলেও ওষুধের দোকানদার তা না দিয়ে একটা ফুড সাপ্লিমেন্ট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাইরে থেকে আলমডাঙ্গায় নিয়োমিত চেম্বার করা এক তরুণ চিকিৎসকের সাথে কিছুদিন পূর্বে কথা হয়। তিনি জানান, প্রথম প্রথম দুই-একটা করে পেশেন্ট যেতো। এরা ফলোআপে গিয়ে ঝাড়ি মারে, তার চিকিৎসায় নাকি কোনো কাজ হয়না। ডাক্তার মন খারাপ করে বসে থাকতেন। একদিন একবার এক রোগী ফলোআপে ওষুধসহ ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার  দেখেন তার প্রেসক্রিপশনের সাথে ওষুধের আকাশ পাতাল ফারাক। ফার্মেসিগুলো অন্য কোম্পানির ওষুধ রোগীকে ধরিয়ে দিয়েছে, যেগুলোর নামের সাথে প্রেসক্রিপশনের মিল নেই।

ডাক্তার বলেন, নামসর্বস্ব কোম্পানির প্রতিনিধিরা নানা প্রলোভন নিয়ে ডাক্তারের নিকট হাজির হতেন। ডাক্তার তাদের প্রলোভনে সাড়া না দেয়ায় এক পর্যায়ে তারা ফার্মেসির সেলসম্যানের নিকট ধর্ণা দেয়া শুরু করলো। তাদেরকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে ব্যবস্থাপত্রের ওষুধ পরিবর্তন করার জন্য। ফর্মেসি মালিকগুলো রোগীর ওষুধ পরিবর্তনের ফলে রোগী যেমন তার রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না, তেমনি রোগীকে পড়তে হচ্ছে নান ধরনের সমস্যায়।