আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় এবার আরও ১ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের নাম ফাঁস

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন অথচ আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় তার নাম রয়েছে এমন আরও একজনের পরিচয় ফাঁস হয়ে পড়ায় নতুন করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে শহরে। জাতীয়করণের নিমিত্তে পাঠানো ওই তালিকায় মো. আসাদুজ্জামানকে ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কুষ্টিয়া জেলার গাংদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ইতঃপূর্বে ইউপি সচিবসহ অন্যান্য কলেজের ৬ শিক্ষকের নাম আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় থাকা সংক্রান্ত সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ ইতোমধ্যেই জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত হয়েছে। সেই সুবাদে জাতীয়করণের আওতাভূক্ত করতে কলেজটির বেশ কিছু শিক্ষক-কর্মচারীর নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের এই নামের তালিকায় আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ ছাড়াও অন্যান্য বেশ কয়েকটি কলেজের এ পর্যন্ত ৭ জন শিক্ষকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে। যাদেরকে খোদ আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরাই চেনেনও না। ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত হয়েছেন হাসিবুল হক ও মকবুল হোসেন, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে জাহিদুল ইসলাম, দর্শনের শিক্ষক হিসেবে আব্দুল হান্নান। অথচ এদের কাউকেই চেনেন না আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে চিনলেও আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ শিক্ষক হিসেবে চেনেন না। এমনকি কলেজেও দেখেননি। অথচ জাতীয়করণের তালিকায় অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে এ ৬ জনের নাম দেখে শিক্ষকরা পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্তীরাও তাদেরকে কোনো দিন দেখেননি বলে দাবি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসিবুল হক নিগার সিদ্দিক কলেজের ব্যবস্থাপনার শিক্ষক। তার শিক্ষক আইডি ০০০০০৩৮২৬০। প্রায় ১ যুগ তিনি সেখানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং নিয়োমিত বেতন/ভাতাদি গ্রহণ করছেন। মকবুল হোসেন হারদী এমএস জোহা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের (টিচার আইডি- ০০০০০২২৯৫৫), জাহিদুল ইসলাম নিগার সিদ্দীক কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের (টিচার আইডি -০০০০০৩৯৬৪২), সুলতানা রাজিয়া হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের আইসিটির ডেমোনেস্ট্রেটর (টিচার আইডি -০০০০০৩৮১২৬)। আব্দুল হান্নান কোনো কলেজেরই শিক্ষক নন, তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৯২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান থেকে তারা নিয়োমিত বেতন/ভাতাদি উত্তোলন করে থাকেন। হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রদর্শক পদে সুলতানা রাজিয়া সেখানে প্রায় ১৫-১৬ বছর চাকরি করছেন। তিনি এখনও নিয়োমিত দায়িত্ব পালন করছেন। তাহলে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে তিনি কখন চাকরি করেন? একই ব্যক্তি একই সময়ে ১২-১৪ কি.মি. ব্যবধানের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কীভাবে চাকরি করবেন?

এ সংক্রান্ত সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের পর শহরে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পরিষদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তার রেশ কাটতে না কাটতে কলেজটির জাতীয়করণের তালিকায় থাকা আরেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের পরিচয় ফাঁস হলে নতুন করে আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জাতীয়করণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাবোর্ড ও ব্যানবেইসে পাঠানো ওই তালিকায় মো. আসাদুজ্জামানকে ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কুষ্টিয়া জেলার গাংদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বলে জানা গেছে। প্রায় দেড় বছর আগে গণ নিয়োগের সময় এই আসাদুজ্জামানকেও নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে সাবেক অধ্যক্ষ কোােন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রায় দেড় বছর আগে ৩৬ জনকে এক সময়ে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

কলেজসূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরে আসাদুজ্জামান মাত্র ৬-৭ দিন কলেজে গিয়েছিলেন। তাও কলেজ টাইম শেষে। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে। একদিন উপস্থিত হয়েই তিনি বিগত ৪-৫ মাসের স্বাক্ষর করেছেন। তিনি কুষ্টিয়া জেলার গাংদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োমিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলেও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিসূত্রে জানা গেছে।

মোবাইলফোনে আসাদুজ্জামানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার সময় তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করা অবস্থায়ও আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে যোগদানের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বোঝেনই তো, কলেজে তো যাওয়া লাগে না। যদি কলেজ সরকারি হয়ে যায়, তাহলে প্রাইমারির চাকরি ছেড়ে দেবো।