আলমডাঙ্গায় সুব্রত বাইন আতঙ্ক : ভারতীয় মোবাইল দিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বেশ কয়েকদিন ধরে সুব্রত বাইনের নামে আলমডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে মোবাইলফোনে মোটা অঙ্কের টাকার চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।  ভারতীয় মোবাইলফোন ব্যবহার করে এ সব চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। চাঁদা না দিলে পরিবারের লোকদের হত্যা ও গুমের হুমকি প্রদান করা হচ্ছে ভারতীয় মোবাইল ০০৯১৮০১৭৮২২৭২৫ নাম্বার থেকে ফোন করে। শুভ্রত বাহিনী নাম করে বাদল মজুমদারের নিকট ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে বাদল মজুমদারের ছেলেকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি দেয় চাঁদাবাজরা। ফোন করে বলে আমাদের একজন মতিঝিলে পুলিশের সাথে বন্দক যুদ্ধে আহত হয়েছে। তাকে চিকিৎসা জন্য ভারতের একটি হাসপাতারে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য ১৩ লাখ টাকা লাগবে। ৯ লাখ টাকা জোগাড় হয়েছে। বাদল মজুমদারকে বাকি ৪ লাখ টাকা দিতে বলে। এছাড়াও আলমডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিকট একই নামে ভারতের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলেও অনেকে জানিয়েছে।। এ নিয়ে শহরবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তবে এ বিষয়ে কেউ থানায় জিডি করেছে কি-না জানা যায়নি।

আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শহরের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক আলম হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, সহকারী অধ্যাপক মোনায়েম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নিকট মোবাইলফোনে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে। জনৈক ব্যক্তি নিজেকে সুব্রত বাইন পরিচয় দিয়ে ভারতীয় মোবাইলফোন নম্বর ব্যবহার করে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। এছাড়া শহরের হোটেল ব্যবসায়ী বাদল মজুমদার, ব্যবসায়ী অশোক কুমার সাহা, রিপন মোল্লা, আবুল কালাম আজাদ, ক্লিনিক মালিক ডাক্তার মঞ্জুসহ শহরের বিভিন্ন পেশার মানুষের নিকট চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। তাদের অনেকে ভয়ে মুখ খুলছে না। আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ শিক্ষক মহাসিন আলী বলেছেন, বাংলাদেশের ভয়ানক শীর্ষ সন্ত্রাসি সুব্রত বাইন নিজে যখন মোবাইল করে চাঁদা দাবি করছে, তখন তো সাধারণ মানুষ ভয় পাবে এটাই তো স্বাভাবিক। অনেকেই গোপনে টাকাও পাঠাচ্ছে। ভারতীয় মোবাইল  ০০৯১৮০১৭৮২২৭২৫ নাম্বার থেকে ফোন করে নিজেকে সুব্রত বাইন দাবি করে অনেকের নিকট  বলেছে, আমাদের একজন ছেলে ঢাকার মতিঝিলে পুলিশের সাথে বন্দক যুদ্ধে আহত হয়েছে। তাকে চিকিৎসা জন্য ভারতের একটি হাসপাতারে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য ১৩ লাখ টাকা লাগবে। ৯ লাখ টাকা জোগাড় হয়েছে। বাকি ৪ লাখ তোকে দিতে হবে। টাকা না দিলে তাকে অথবা তার সন্তানকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি  দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায় ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেফতার করে সেখানকার গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ)। কোলকাতায় সুব্রতর বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অস্ত্র রাখার দায়ে মামলা রয়েছে। কোলকাতা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে নেপালে পালান সুব্রত বাইন। সেখানে নিজের নাম বদলে তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন। কোলকাতার গোয়েন্দা পুলিশ ও কোলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ কোলকাতার পাম অ্যাভিনিউ থেকে সুব্রতকে আবারও গ্রেফতার করে। এ সময় সুব্রতর কাছে একটি নাইন এমএম পিস্তল পাওয়া যায়। সুব্রত কোলকাতায় গাঢাকা দিয়ে ফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়মিত চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি কোলকাতায় নিজেকে ‘ফতে আলী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০টি খুনের মামলা রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগীকে ভারতীয় দূতাবাসে হস্তান্তর করা হয়। অনুপ চেটিয়াকে পাওয়ার এক দিনের মধ্যে বাংলাদেশের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ফেরত দেয় ভারত, এরপর থেকে সাজ্জাদ হোসেন ও সুব্রত বাইনকে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। কথিত আছে সুব্রত বাইন ভারতীয় জেল থেকে এখনও বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী রাসেল বলেন, সুব্রত বাইনের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ জানায়নি।