আলমডাঙ্গায় দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল সার ও কীটনাশক : কৃষকরা সর্বস্বান্ত

রহমান মুকুল: আলমডাঙ্গার কীটনাশক (এগ্রো) ব্যবসায়ী, ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশক কোম্পানির সিন্ডিকেট এলাকার গরিব ও অসচেতন কৃষকদের সর্বস্বান্ত করার ভয়ানক খেলায় মেতেছে। কৃষকদের অসচেতনতা, অশিক্ষা ও দারিদ্রকে পুঁজি করে আলমডাঙ্গার কীটনাশক ব্যবসায়ী ও নিন্নমানের কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিরা এ ভয়ঙ্কর প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। দু পক্ষের উদ্যোগে পৌর শহরসহ গ্রামের কীটনাশক দোকানগুলোতে ভেজাল ও নিম্নমানের দস্তা সারে সয়লাব হয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে কীটনাশক ব্যবসায়ী ও চাষিদের সাথে কথা বলে যৌথ প্রতারণার এ চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে চলছে বোরো ধান, পান, ভুট্টা, গম ও রবি শস্য চাষের ভরা মরসুম। কৃষকের মাঠে ধান, ভুট্টা ও পানচাষে রাসায়নিক দস্তা অত্যাবশকীয়ভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। দস্তা সার ধানক্ষেতের তাজাভাব বজায় রাখতে ও গোছা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ সুযোগ ধরতে দেশে মানসম্পন্ন কীটনাশক প্রস্তুতকারী কোম্পানির পাশাপাশি অসংখ্য ভেজাল ও নিম্নমানের কোম্পানি আলমডাঙ্গার কীটনাশক (এগ্রো) ব্যবসায়ীদের সাথে মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করে এ প্রতারণার জাল বিছিয়েছে। আলমডাঙ্গা এলাকার অসৎ ও অধিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ভেজাল কোম্পানির উৎপাদিত দস্তা বাজারজাত করছেন। অত্যন্ত সস্তায় কিনে চড়া মূল্যে বিক্রি করার লোভে মূলত ব্যবসায়ীরা কৃষকের সাথে প্রতিনিয়ত এ ধরনের প্রতারণা করে চলেছে। এ ধরনের ভেজাল দস্তায় কৃষকের ফসলের কোনো উপকার তো করেই না, বরং কৃষকরা প্রতারিত হয়ে চলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে মানসম্পন্ন এথারটন কোম্পানির দস্তা ‘কৃষকবন্ধ-৩৬% মনোহাইট্রেড মূল্য ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা, সিনজেনটার দস্তা গ্রজিন ৩৬%, ১৯০ টাকা, আলফা কেমিকেলের আলফা জিঙ্ক ৩৬% এর মূল্যও একই রকম। অথচ নিম্ন ও ভেজাল বলে পরিচিত যশোরের হোসেন এগ্রো কেমিকেলের ময়না দস্তার দাম ২৫ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়াও ৱ্যাভেন এগ্রো ও চায়না এগ্রো কেমিকেল কোম্পানির দস্তা সার কৃষকরা তাদের ফসলে প্রয়োগ করেও আশানুরূপ ফল পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌর শহরসহ গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে ভেজাল দস্তা হিসেবে পরিচিত ময়না জিংক, ময়ূরি, সুফলন, জিংক সালফার ও জননী জিংক নামের দস্তা সারে দোকান ঠাসা। এছাড়াও সুইট এগ্রো কেমিকেল নামের ঢাকার একটি কোম্পানির স্থানীয় পরিবেশক ঝিনাইদহর জনৈক ব্যক্তি। সুইট এগ্রোর দস্তা ফাইন জিংক ২১% কৃষকরা মাঠে ব্যবহার করে প্রতারিত হয়েছেন। এ পরিবেশক আলমডাঙ্গা শহরে ডিলার নিয়োগ করতে না পারলেও উপজেলার জামজামি বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম শওকত, বলিয়ারপুর বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ, ঘোলদাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল ও মুন্সিগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাককে ডিলার নিয়োগ দিয়ে অবাধে কৃষকদের প্রতারণা করে ভেজাল সার বিক্রি করে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে ভেড়ামারার ইস্ট ওয়েস্ট কীটনাশক কোম্পানির দানাদার দস্তা সার কৃষাণ জি ২১%, কৃষাণ মার্কা হেপ্টা হাইট্রেড ২১% আলমডাঙ্গা কৃষি অফিস কর্তৃক বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা শহরসহ গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন দোকানে এ নিষিদ্ধ দস্তা সার অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা কৃষি অফিসার একেএম হাসিবুল হাসান বলেন, আমরা ভেজাল সার ও কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে এমন সংবাদ পেলেই তা নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে মৃত্তিকা গবেষণাগার খুলনার আঞ্চলিক দপ্তরে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিই। ভেজাল প্রমাণিত হলে ওই কোম্পানির সার ও কীটনাশক বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের নিষেধ করি ও বাজার থেকে সেগুলো উঠিয়ে নিয়ে ধ্বংস করা হয়। তিনি আরও জানান, ইতঃপূর্বে রাজবাড়ী জেলার পাংশার রাকিব ট্রেডিং করপোরেশনের আমেরিকান যমুনা জিংক, যশোর আড়পাড়ার মেসার্স হোসেন ট্রেডার্সের ময়না জিংক ঢাকার জেনেটিকার জিংগ্রো প্লাসের দস্তা কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঝিনাইদহের কোম্পানি সার্ফ এগ্রোর দস্তা শক্তি প্লাস জিংক- যা সালফেট মনোহাইড্রেড। এটাও কালো তালিকাভুক্ত। এ সারগুলো ফসল ও ফসলি জমির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ময়না জিংক, ময়ূরি, সুফলন, জিংক সালফার ও জননী জিংক নামের দস্তা সারে দোকান ঠাসা। এছাড়াও সুইট এগ্রো কেমিকেল নামের ঢাকার একটি কোম্পানির স্থানীয় পরিবেশক ঝিনাইদহর জনৈক ব্যক্তি। সুইট এগ্রোর দস্তা ফাইন জিংক ২১% কৃষকরা মাঠে ব্যবহার করে প্রতারিত হয়েছেন। এ পরিবেশক আলমডাঙ্গা শহরে ডিলার নিয়োগ করতে না পারলেও উপজেলার জামজামি বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম শওকত, বলিয়ারপুর বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ, ঘোলদাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল ও মুন্সিগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাককে ডিলার নিয়োগ দিয়ে অবাধে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন।

কেদারনগর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামের অধিকাংশ গরিব কৃষক বাকি করে সার ও কীটনাশক কেনেন। পরে ফসল বিক্রি করে সার ও কীটনাশকের টাকা পরিশোধ করেন। এ সুযোগ নিয়ে অসৎ ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের ভেজাল সার ও কীটনাশক গছিয়ে দেন। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে অসৎ ব্যবসায়ীদের নিকট গ্রামের সহজসরল অশিক্ষিত দরিদ্র কৃষক প্রতারিত হয়ে আসছে। নওদাপাঁচলিয়া গ্রামের কৃষক তোতা মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে তিনিও দস্তা সার কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছিলেন। জমিতে প্রয়োগ করে ঠকেছেন। ফসলের কোনো উপকার হয়নি। ওই বছর থেকে তিনি আর কম দামের সার কিংবা কীটনাশক কেনেন না বলে জানিয়েছেন। চরপাড়া গ্রামের ধানচাষি অহিদুল ইসলাম জানান, শহরের অনুমোদিত ডিলারদের নিকট থেকে না কিনে তিনি গ্রাম্য বাজারের ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে যতোবার কম দামের সার ও কীটনাশক কিনেছেন, ততোবার প্রতারিত হয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ভালো সার ও কীটনাশকের মতোই চড়া দামে অসৎ ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের ভেজাল সার ও কীটনাশক বিক্রি করে থাকে।

সার-কীটনাশকসহ কৃষিপণ্যের অগ্নিমূল্য। এমন দুর্মূল্যের সার-কীটনাশক কিনে প্রতারিত হওয়ার মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন কৃষককূল। অথচ এ সকল ভেজাল সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর কোনো আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সচেতনমহলের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।