আলমডাঙ্গার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট আজ : ৫৬টির মধ্যে ৫৩ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ : নির্বাচন কমিশন কঠোর হলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার: আজ শনিবার চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ৪৭ জেলার ৬২০টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমূল পর্যায়ের এই ভোট নির্বিঘ্ন করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনকে ঘিরে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী বিশেষ নিরাপত্তায় গতকালই পৌঁছে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে।

তৃতীয় ধাপে আজকের নির্বাচনে দেশের ৬২০টি ইউনিয়নের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদেও ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৬টি ইউপি এলাকায় মোট ৫৬টি কেন্দ্রের ৩০৭টি কক্ষে সকাল থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। তবে আলমডাঙ্গার ৫৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি কেন্দ্র রয়েছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায়। ৫৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে প্রশাসনিকভাবে বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ৪ দিনের জন্য নির্বাচনী ৬টি ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন ৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গত বৃহস্পতিবার থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ শুরু করেছেন তারা।

আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর, বেলগাছি, জামজামি, ডাউকি, জেহালা ও খাসকররা ইউনিয়ন নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই জোরদার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনী ৬টি ইউনিয়নে ৪ নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছে জেলা প্রশাসন। কালিদাসপুর এবং বেলগাছি ইউপি এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া হাসান, জামজামি ও ডাউকি এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার রুহুল আমিন, জেহালা ইউপি এলাকায় রয়েছেন সহকারী কমিশনার সাব্বির রাহমান সানি এবং খাসকররা ইউপি এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী কমিশনার তরিকুল ইসলাম। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীতে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম।

আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণের হিসেবে তালিকায় রয়েছে। এছাড়া ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায়।

জেহালা ইউনিয়নের ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৮টি কেন্দ্র। ঝুঁকিপূর্ণ ৮টি কেন্দ্রের মধ্যে মাদারহুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেহালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণপুর আশ্রয়ন প্রকল্প কমিউনিটি সেন্টার এবং পুঁটিমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেলগাছি ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে সবকটিই ঝুঁকিপূর্ণ। ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে দোয়ারপাড়ার সেলিমের ইটভাটার অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র ও বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এ দুটি ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।

জামজামি ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে ঘোষবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচলিয়া জামাল উদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নওদা পাঁচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

খাসকররা ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে কায়েতপাড়া উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পারলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তিয়রবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই ৪টি কেন্দ্রই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।

ডাউকি ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও ৮টির মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে রয়েছে ডাউকি বশিরা মালিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাদেমাজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাদেমাজু বাদল-স্মৃতি একাডেমি এবং ছত্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ ৪টি কেন্দ্র।

নির্বাচনী ৬ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ১৮৪ এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদের ৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতরা হলেন- জামজামী ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য হানিফুজ্জামান, কালিদাসপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য নুর বানু এবং বেলগাছি ইউপির ২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য সুফিয়া খাতুন।

জানা গেছে, তৃতীয় দফার নির্বাচনে কালিদাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৫ প্রার্থী। এবারের ভোটযুদ্ধে লড়ছেন- নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান, চশমা প্রতীক নিয়ে হারুন অর রশিদ, ঘোড়া প্রতীক নিয়ে আহসান উল্লাহ এবং আনারস প্রতীক নিয়ে মোল্লা কামরুজ্জামান। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৩২ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে কালিদাসপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী নুর বানু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ভোটার রয়েছেন ১৭ হাজার ৫৭০ জন।

ডাউকি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হাজি ইউসুফ আলী, চশমা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী মাস্টার, মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বাবলু, এবং আনারস প্রতীক নিয়ে আব্দুল কাদের রানা নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ২৮ এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১০ জন নির্বাচনে লড়ছেন। ইউনিয়নে ভোটার রয়েছেন ১৪ হাজার ৫২ জন।

খাসকররা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন লড়ছেন এবারের নির্বাচনে। নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আজিবর রহমান, ঘোড়া প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ লাল, আনারস প্রতীক নিয়ে কুতুবুল আলম এবং চশমা প্রতীক নিয়ে এএইচএম মোয়াজ্জেম নেমেছেন ভোটের মাঠে। এছাড়া সাধারণ সদস্য ২৭ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে লড়ছেন ১০ জন। এই এলাকায় ভোটার ১৭ হাজার ২০৭ জন।

জামজামি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন লড়ছেন। এরা হলেন- নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মোশারফ হোসেন, আনারস প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাবলু চৌধুরী এবং মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে হুমায়ুন কবীর। এছাড়া সাধারণ সদস্য ২৮ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮ জন লড়ছেন। তবে জামজামি ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য হানিফুজ্জামান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। জামজামি ইউপির মোট ভোটার ১৩ হাজার ৭৬৪ জন।

জেহালা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিরা হলেন- নৌকা প্রতীক নিয়ে হাসানুজ্জামান হান্নান, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রোকন, চশমা প্রতীক নিয়ে আব্দুল আজিজ, আনারস প্রতীক নিয়ে আব্দুল হান্নান মাস্টার, মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে কামাল হোসেন এবং ঘোড়া প্রতীক নিয়ে রহিদুল ইসলাম। এছাড়া সাধারণ সদস্য ৩৭ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ জন লড়ছেন। জেহালায় ভোটার রয়েছে ১৬ হাজার ২২৭ জন।

বেলগাছি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন নির্বাচনে লড়ছেন। প্রার্থীরা হলেন- নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মন্টু, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আমজাদ হোসেন এবং আনারস প্রতীক নিয়ে একমাত্র স্বতন্ত্রপ্রার্থী এসএম গোলাম সরোয়ার শামীম। এছাড়া সাধারণ সদস্য ৩২ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬ জন লড়ছেন। তবে বেলগাছি ইউপির ২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য সুফিয়া খাতুন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ভোটার রয়েছেন ১১ হাজার ১৮৮ জন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচন অবাধ করতে ইসিকে কঠোর দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়েছেন। ইসিও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে। ইসির নির্দেশনায় ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের দাঙ্গা, সন্ত্রাস বা অনিয়ম সংঘটিত হলে কিংবা আইন ও বিধির কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তাত্ক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। প্রথম দুই ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপে সুন্দর ভোট হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, অপরাধী যে পর্যায়ের হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম শক্ত হাতে দমন করা হয়।