আলমডাঙ্গার ৪২ জন প্রাক প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক শ্রান্তি বিনোদন ভাতা থেকে বঞ্চিত

চাহিদামতো ঘুষ না পেয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর মুনসুর আলীর তেলেসমাতি
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪২ জন প্রাক প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক শ্রান্তি বিনোদন ভাতা থেকে বঞ্চিত হলেন। চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দিতে না পারায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ওই ন্যায্য পাওনা অর্থ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর মুনসুর আলীর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪২ জন প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ লাভ করেন। ইতোমধ্যে তাদের চাকরি ৩ বছর পূর্ণ হওয়ায় নিয়মানুযায়ী গত জুনের আগেই তাদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়ার কথা ছিলো। চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রতি ৩ বছর পর পর ১৫ দিনের ছুটিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্ব-স্ব বেসিকের সমপরিমাণ অর্থ শ্রান্তি বিনোদন ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন। নিয়োগকৃত ৪২ জন শিক্ষকের প্রত্যেকের বেসিক বেতন ১১ হাজার ২৪০ টাকা করে। সে মতে ৪২ জন শিক্ষকের প্রত্যেকেরই ১১ হাজার ২৪০ টাকা করে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়ার ন্যায্যতা ছিলো এবং তা গত জুন মাসের পূর্বেই।
অভিযোগ উঠেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর মুনসুর আলীর চাহিদা মোতাবেক ঘুষের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ৪২ জন শিক্ষককে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রদান করা হয়নি। অভিযোগকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কেদারনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিপন, ছত্রপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন অর রশিদ, আসাননগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রিন্স, ব-বিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মজিদ ৪২ জন শিক্ষকের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর মুনসুর আলীর নিকট যান। তিনি জন প্রতি ১ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করেন। অর্থাৎ ৪২ জন ৪২ হাজার টাকা। কিন্তু শিক্ষকরা জন প্রতি ৫শ’ টাকা করে ঘুষ দিতে স্বীকার করলেও মুনসুর আলী তার দাবিতে অনড় থাকেন। ইতোমধ্যে জুন মাস অতিবাহিত হলেও তিনি শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রদান করেননি। নিয়মানুযায়ী জুন মাসের মধ্যে ওই অর্থ উত্তোলন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে টাকা ফেরত পাঠাতে হয়।
এ বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিনিধিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা হিসাব রক্ষণ অডিটর মুনসুর আলী জানান, ওই ৪২ জন শিক্ষকের দাবির আইনগত ভিত্তি নেই। তাদের চাকরি রাজস্বখাতে যাওয়ার ৩ বছর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাবেন। দেশের কোথাও প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাননি।
এদিকে, কুষ্টিয়ার ১৮ নং লাহিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক রিপন আলী বলেন, আমরা তো জুন মাসেই শ্রান্তি বিনোদন ভাতা উত্তোলন করে নিয়েছি। একই জেলার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রথমিক সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমও একই রকম তথ্য দিয়েছেন। এমনকি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহিদুল হকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারাও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা উত্তোলন করেছেন। তাদের দাবি শ্রান্তি বিনোদন ভাতা যদি তাদের অপ্রাপ্য হতো তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীভাবে অর্থ ছাড় দিয়েছিলো?
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক (অর্থ) নবী হোসেন তালুকদার বলেন, যেহেতু তাদের চাকরি রাজস্বভূক্ত হয়েছে, সে কারণে তাদের অধিকার রয়েছে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়ার।