আলমডাঙ্গার স্কুলছাত্রী তাহেরা হত্যা মামলার নতুন মোড়

ময়নাতদন্ত প্রতিবদেনে আত্মহত্যা বলায় মানতে নারাজ মামলার বাদী

 

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার স্কুলছাত্রী তাহেরা হত্যা মামলার তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা বলে মত দেয়ায় মামলাটি এখন অপমৃত্যু মামলার দিকে নেয়ার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমডাঙ্গা থানার ওসি তদন্ত এরকমই তথ্য দিয়ে বলেছেন, ময়নতদন্ত রিপোর্ট তো আর পুলিশ করেনি। করেছেন চিকিৎসক। ধর্ষণের আলামতও মেলেনি। এদিকে চুয়াডাঙ্গা লোকমোর্চা স্কুলছাত্রী তাহেরা হত্যার প্রতিবাদে করণীয় নির্ধারণে গতকাল বৈঠক করেছে।

lokmorcha

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে মন্তব্য করায় মামলার বাদী তথা স্কুলছাত্রী তাহেরা খাতুনের পিতা শাজাহান আলী বলেছেন, ময়নাতদন্তে ভুল হয়েছে। পুনঃময়নাতদন্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে কি-না তা নিকটজনদের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। লাশে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন এবং গলায় বাধা রশিতে ফাঁসের বদলে গিট থাকার পরও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কীভাবে আত্মহত্যা বলে মন্তব্য করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। বিষয়টি শোনার পর আমরা হতবাক হয়েছি।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডা. রাজিবুল ইসলাম স্বাক্ষর করেছেন। বিস্তারিত জানার জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এর প্রেক্ষিতে ডা. রাজিবুল ইসলামের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, সুসাইড। গলায় ফাঁস দিয়ে অত্মহত্যা। তবে তিনি লাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা এবং পেটে আছড়ানোসহ হাতে কালসিরে দাগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ছত্রপাড়ার শাজাহান আলী তার দু কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলমডাঙ্গার আন্দধামের আব্দুল কাদেরের দোতলাবাড়ির নিচতলার দুটি ঘর ভাড়ায় নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গত ৯ ডিসেম্বর ছোট মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে শাজাহান ছিলেন তার গ্রামের বাড়ি। বড় মেয়ে আলমডাঙ্গা পাইলট বালিকা মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষাথী মেধাবী ছাত্রী তাহেরা খাতুন ওই বাসায় একা ছিলো। বেলা ২টার দিকে তার নানি বাসায় ফিরে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ। তিনি অপর এক মেয়ের বাড়ি ফেরেন। সেখান থেকে মেয়েকে সাথে নিয়ে ওই বাসায় ফিরে দেখতে পান লাশ ঝুলছে। ঘরের মধ্যে সিলিং ফ্যানে গলায় রাশি বাধা অবস্থায় লাশ ঝুলছে দেখে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়। লাশে আঘাতের চিহ্নি দেখে স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন দানা বাধে। সন্ধ্যায় পুলিশ হেফাজতে নেয় মৃতদেহ। পরদিন ময়নাতদন্ত করা হয়। নিজ গ্রামে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। তাহেরা হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে আলমডাঙ্গার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামে। ভাঙচুরের পর তাতে ভাটা পড়ে। তাহেরার গৃহশিক্ষক রাশেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরই মাঝে মামলার বাদী তথা তাহেরার পিতা অভিযোগ করে বলেন, আমি যেভাবে মামলা করতে চেয়েছিলাম সেভাবে মামলা নেয়নি পুলিশ। তিনি পুলিশি তদন্তে আস্থাহীনতার কথা উল্লেখ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলের জন্য আবেন করবেন বলেও জানান। এরই মাঝে গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে আত্মহত্যা বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেখতে চাওয়া হলে অবশ্য তিনি তা দেখাননি। অপরদিকে ময়নাতদন্তের সপ্তার মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া এবং আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মামলার বাদী বলেছেন, ময়নাতদন্তে হয়তো ভুল হয়েছে। পুনঃময়নাতদন্তের আবেদন করা হবে কি-না তা নিকটজনদের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চা ও জেলা জিসিএ দল সমন্বিতভাবে তাহেরা হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল বিকেলে জেলা লোকমোর্চার সচিবালয়ে জরুরি সভায় মিলিত হয়ে তারা এ হত্যাকাণ্ডের জোর প্রতিবাদ জানান এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। প্রাথমিকভাবে তারা আজ তাহেরা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে সরেজমিনে যাবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে জরুরিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সিদ্ধান্ত মতে আজ বেলা ৩টায় আলমডাঙ্গার আনন্দধামে সরেজমিনে পরিদের্শনে যাবে লোকমোর্চা ও জিসিএ সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম। তারা প্রাথমিকভাবে থানায় ওসির কাছে মামলার বর্তমান পরিস্থিতি ও অগ্রগতি সম্বন্ধে জানবেন। একই সাথে কথা বলবেন পুলিশ সুপারের সাথে। যাতে তাহেরা হত্যা মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হয়। পরবর্তীতে জেলা লোকমোর্চা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করবে। এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত জেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, জিসিএ সভাপতি ওয়ালিউর রহমান মালিক, সদর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি সহিদুল হক বিশ্বাস, জীবননগর উপজেলা সভাপতি আবুল কালাম, প্রত্যাশার নির্বাহী পরিচালক বিল্লাল হোসেন, অ্যাড. মানিক আকবর, কোহিনুর বেগম, জহির রায়হান, পারভীন লায়লা, আসমা হেনা চুমকি, অ্যাড. আকবর আলী, মনিরুজ্জামান মনি, লিটু বিশ্বাস, খাইরুল মিনা ও আহাদ আলী মোল্লা।