আলমডাঙ্গার বাদেমাজুতে মধ্যযুগীয় বর্বরতা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বড়ভাইয়ের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে নির্মমভাবে মারপিট করে সর্বাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষতসহ হাত-পা ভেঙে দিয়েছে প্রাক্তন স্বামীর ছোট ভাই-বোন মিলে। ঘটনাটি ঘটেছে আলমডাঙ্গার বাদেমাজু গ্রামে। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

সরজমিনে বাদেমাজু গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১২ বছর আগে বাদেমাজু গ্রামের করিম মণ্ডলের ছেলে সুজন (৩২) প্রতিবেশী  ইছাহাক খলিফার মেয়ে নাসিমার (২৫) প্রেমে জড়িয়ে পরস্পরকে বিয়ে করেন। কিন্তু এক বছর পার না হতেই সুজন নাসিমাকে তালাক দিয়ে দেন। পিতৃহীন নাসিমা বাধ্য হয়ে পেটের তাগিদে ঢাকায় একটি চাকরিতে যোগদান করেন। এদিকে নাসিমার চাকরি হয়েছে এবং মাস গেলে ভালো বেতন পাচ্ছে এমন খবর জানতে পেরে ধুরন্ধর সুজন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সে ঢাকায় নাসিমার কাছে যাওয়া আসা শুরু করেন। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে আবার বিয়ে করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেসে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাত কাটাতেন। নাসিমা স্বামী হিসেবে বিশ্বাস করে প্রতিমাসের বেতনের টাকা সুজনের হাতে তুলে দিতেন। এইভাবে কয়েক বছর কাটানোর পরও নাসিমাকে বিয়ে না করায় নাসিমা বুঝতে পারে সুজন তাকে ধোকা দিচ্ছে। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারিত নাসিমা বছরখানেক আগে সুজনকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন। এমনকি  তার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেন। ভবঘুরে সুজন টাকা না পেয়ে নুতন চালাকির আশ্রয় নেন। তিনি নাসিমাকে বলেন, ২৪ মার্চ শুক্রবার রাতে তাদের আবার বিয়ে হবে। নাসিমা যেন সরাসরি সুজনের বাড়িতে চলে আসেন। এমন প্রতিশ্রুতির কথা শুনে নাসিমা ঢাকা থেকে বিয়ের বাজার করে, সোনার চেন বানিয়ে এবং হাতে কিছু গচ্ছিত টাকা নিয়ে গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সুজনের বাড়িতে হাজির হন। বাড়িতে যাওয়ার পরপরই সুজন কায়দা করে নাসিমাকে ঘরে ঢুকিয়ে আটকে রেখে নিজে সটকে পড়েন। পরে ওই রাতেই সুজন তার ছোট ভাই কাফিলউদ্দিন মাদরাসার শিক্ষক সুমন ও ছোট বোন সুফিয়ার সাথে ষড়যন্ত্র করে। গভীর রাতে মাদরাসা শিক্ষক সুমন ও তার বোন ঘরে ঢুকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে নাসিমার একটি হাত ও একটি পা ভেঙে দেন। এ সময় তারা নাসিমার সোনার গয়না, বিয়ের বাজার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ করা হয়। নাসিমার চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে গেলে তাকে বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। এই অবস্থায় গ্রামবাসীর অনুরোধে উজ্জ্বল নামের এক ভ্যানচালক তাকে তুলে হারদী হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। কর্তব্যরত ডাক্তাররা তার একটি হাত ও একটি পা ভেঙে গেছে বলে জানান।

এদিকে গ্রামবাসী জানায়, সুজন, সুমন ও বোন সুফিয়া যুক্তিহীন বর্বর স্বভাবের। গ্রামের একাধিক মহিলা অভিযোগ করেন, তারা ঘটনার রাতে নাসিমার মাথার এক গোছা ছেড়া চুল সুফিয়ার হাতে দেখেছে। পিতৃহীন একটা অবলা নারীর ওপর এমন অমানসিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।