আলমডাঙ্গার বণ্ডবিলে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় একই রাতে একই রোডে গাছ ফেলে পৃথক দুটি স্থানে ডাকাতি সংঘটিত ও আরও ৩ স্থানে ডাকাতির অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সারারাত ডাকাতচক্রের বিরুদ্ধে অভিযানকালে আহত হয়েছেন থানার এক কনস্টেবল। একটি অপচক্র ডাকাতির জন্য সারারাত মরিয়া হয়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের তৎপরতায় পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

জানা গেছে, গত সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আলমডাঙ্গা পৌর সীমানাস্তম্ভের নিকট রাস্তায় গাছ ফেলে একদল ডাকাত ডাকাতি শুরু করে। ওই ডাকাতচক্রের কবলে পড়েন আলমডাঙ্গার যুবলীগের ৭ নেতা। এদের একজন সোহেল রানা শাহীন বলেন, সন্ধ্যায় তারা চুয়াডাঙ্গায় ইফতার সেরে মুন্সিগঞ্জে যান। মুন্সিগঞ্জে তাদের পূর্ব নির্ধারিত একটি মিটিং শেষে রাতে একটি প্রাইভেট কার ও ১টি মোটর সাইকেলে ৭ জন আলমডাঙ্গায় ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা আলমডাঙ্গা পৌরসভা এলাকার সীমানাস্তম্ভের নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছুলে রোডে পূর্ব থেকে ফেলা রাখা একটি গাছ দিয়ে তাদের ব্যারিকেড দেয়া হয়। তারা গাড়ি থামালে দেখতে পান গামছা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকা ১৫/১৬ জনের একটি হাফপ্যান্ট পরা ডাকাতদল। তাদের কারো হাতে দা আবার কারও হাতে রাম দা। তারা ছুটে গিয়ে মাথার ওপর দা ধরে প্রথমে মোটরসাইকেল থেকে দুজনকে নামিয়ে প্রাইভেটের ভেতর ঢুকিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেয়। পরে সকলের নিকট থাকা টাকা হাতিয়ে নেয়। সবমিলিয়ে ৩৬/৩৬ শ টাকার মতো হবে। এরই মাঝে চুয়াডাঙ্গার দিক থেকে একটি নসিমন ও একটি ট্রাক আলমডাঙ্গার দিকে ছুটে আসে। তাদেরকে থামিয়ে নসিমন চালকের নিকট থেকে দেড় হাজার ও ট্রাক ড্রাইভারের নিকট থেকে ৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। মাত্র ১৮/২০ মিনিটের মতো সময়ের মধ্যে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে পুলিশের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে ডাকাতচক্র প্রথমে পুলিশের গাড়ি ঠাওর করতে পারেনি। তারা ওই গাড়ি দাঁড় করিয়ে ডাকাতির মন স্থির করে। পরে গাড়ি থেকে পুলিশকে ঝাঁপ দিয়ে নামতে দেখে ডাকাতদলটি পালিয়ে যায়।

একই রোডে ভোরে সেহরির সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আলমডাঙ্গা বাসটার্মিনালের নিকটবর্তী স্থানে রাস্তার পাশের অর্জুনবৃক্ষ কেটে ফেলে ২টি মাইক্রোবাস ডাকাতি করে। ডাকাতির শিকার ওই মাইক্রোবাস দুটি স্টেশনের সামনে গিয়ে এ কথা স্টেশন বাজারের কয়েকজন জেগে থাকা দোকানিকে জানালেও তাদের পরিচয় দোকানিরা বলতে পারেনি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত এ ডাকাতির ঘটনাস্থলে ২টি গাছ কাটার করাত ও ১টি রামদা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে ডিএসবি ওয়াচার মহিউদ্দীন সেগুলো উদ্ধার করেন।

একই রাতে একই রোড়ে একই কায়দায় রাস্তায় গাছ ফেলে আরও ৩টি ডাকাতির অপচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উত্তরা ফিলিং স্টেশনের নিকটবর্তী স্থানে, এরই কয়েক শ গজ দূরে একস্থানে ও একটু দূরে মাদারহুদা রোডে গাছ ফেলে ডাকাতির অপচেষ্টা করে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র।

এ সম্পর্কে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউর রহমান বলেন, ডাকাত তাড়তে তাড়তে শেষ করেছেন রাত।  রাত ১২টার দিকে তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বটিয়াপাড়ায় হত্যা মামলার আসামি ধরতে বের হন। পথিমধ্যে উত্তরা ফিলিং স্টেশনের নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে তিনি রাস্তায় গাছ আড়াআড়িভাবে পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। তাকে নামতে দেখে ডাকাতরা দৌঁড়ে মাঠের দিকে পালিয়ে যায়। তিনিও ফোর্সসমেত ডাকাতদলের পিছু নিলেও তাদের আটক করতে পারেন নি। পান বরোজের ভেতর তারা আত্মগোপন করলে রাতে আর খুঁজে পাননি। ডাকাত ধরতে চালান অভিযান। এরপর যান বটিয়াপাড়ায়। বটিয়াপাড়ায় অভিযান শেষে ধৃত আসামিকে নিয়ে ফিরে আসার পথে বণ্ডবিল গেট ও উত্তরা ফিলিং’র মাঝে আবারও রাস্তার ওপর গাছ পড়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামান। আসামিকে গাড়িতে রেখেই ডাকাত ধরার অভিযানে নামেন। পরে ভোরে  থানায় ফেরার পথে বাস স্ট্যান্ডের নিকটবর্তী স্থানে একই কায়দায় রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতির চেষ্টার সময় তিনি উপস্থিত হন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায় বলে তিনি জানান। এছাড়া বণ্ডবিল হয়ে মাদারহুদা গ্রামে যাওয়ার রাস্তায়ও একইভাবে গাছ ফেলে ডাকাতির অভিযোগ পায়া গেছে। তবে কারা ডাকাতির শিকার হয়েছেন তা জানা যায়নি।

সারারাতব্যাপী ডাকাতচক্রের অপতৎপরতা মোকাবেলা করা  আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি অংশের দাবি তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর আন্তরিকতার কারণে অনেক মানুষের জান মালের রক্ষা হয়েছে। পুলিশের রাতব্যাপী তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ডাকাতি সংঘটিত হতে পারিনি। এস আই জিয়াউর রহমান, এএসআই গিয়াস ও এএসআই আজিজুল ঝুঁকি নিয়ে সারারাত ডাকাতচক্রের মোকাবেলা প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। ডাকাতচক্রের বিরুদ্ধে অভিযানকালে আলমডাঙ্গা থানার কনস্টেবল লিটন আহতও হয়েছেন।