আলমডাঙ্গার নাগদাহে কৃষক শহিদ হত্যামামলার আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

মোমিনপুর প্রতিনিধি: বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেন না। তারপরও দাঁড়িয়েছিলেন পিতা হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে মানববন্ধনে। বেশিক্ষণ দাঁড়াতে না পারলেও বাড়ি ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি। তার দাবি, আমাদের সামনে যারা আমার পিতাকে দলেচটকে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে চোখের নোনাজলে শাড়ির আঁচল ভিজিয়ে স্বামী হত্যার বিচার চাইলেন স্ত্রী রসিলা খাতুন। তিনিই তার স্বামী হত্যামামলার বাদী।

            চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা নাগদাহ উত্তরপাড়ার কৃষক শহিদকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার বাড়ির উঠোনে দলেচটকে হত্যা করা হয়। সালিস থেকে ছুটে এসে তাকে হত্যা করে সালিসের কয়েক মাতবরসহ তার চাচাতো ভাইদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধে জড়ানো ছোট এবং তার লোকজন। এ অভিযোগে দায়ের করা হত্যামামলায় ১১ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হলেও পুলিশ তাদের একজনকেও গত ৫ দিনে ধরতে পারেনি। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেছেন, হত্যাকারীদের ধরে আইনে সোপর্দ করতে পুলিশ আন্তরিকভাবেই কাজ করছে। গ্রেফতার এড়াতে আসামিরা আত্মগোপন করেছে। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।

নাগদাহ উত্তরপাড়ার আপিল মণ্ডল বাড়ি সংলগ্ন ৪ শতক জমি আনুমানিক ৩ বছর আগে বিক্রি করেন। কেনেন প্রতিবেশী দুধব্যবসায়ী ছোট। জমি কিনে গোডাউন নির্মাণ করলেও রেজিস্ট্রি করে না নেয়ায় বিরোধ দানা বাধে। বিক্রেতার দু ছেলে নতুন করে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে। এ বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে উত্তরপাড়ার তিন রাস্তার মোড়ে সালিসের আয়োজন করে। সালিসের এক পর্যায়ে আপিলের দু ছেলে সাদ আলী ও হোসেন আলী দ্রুত সরে পড়ে। তাদের ধাওয়া করে সালিসসভার কয়েকজন মাতবরসহ উত্তেজিতরা। তারা সাদ আলী ও হোসেন আলীকে না পেলেও সামনে পায় তাদের চাচাতো ভাই ক্ষুদ্রচাষি শহিদকে। তাকে তার বাড়ির উঠোনেই মারপিট ও দলেচটকে হত্যা করা হয়। পরদিন তার স্ত্রী বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামিদের গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বাদ জুম্মা জোয়ার্দ্দারপাড়া জামে মসজিদের সামনেই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। নামাজ আদায়ের পর প্রভাবশালীদের বাঁকা চোখে মুসল্লিদের অনেকেই মানববন্ধন এড়িয়ে বাড়ি ফেরেন। এরই এক পর্যায়ে নিহত শহিদের বাড়ির সামনে তার নিকটজনেরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

নিহত কৃষক শহিদের রয়েছে তিন মেয়ে। বড় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো দাঁড়াতে না পারলেও পিতা হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে মানববন্ধনে লাঠির ওপর ভর করে দাঁড়ান। দাঁড়াতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়া হয়। সেখানে সে বলে, আব্বাকে আমাদের সামনে মারলো। আমরা বাঁচাতে পারলাম না। এখন তাদের বিচারের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াবো। আল্লাহ আমার সেই শক্তিও দেয়নি। আমি কী করলে আমার আব্বা হত্যার বিচার পাবো জানিনে।

              গতকাল শুক্রবার মানববন্ধনে বুকফাঁটা আর্তনাদে স্ত্রী চাইলেন স্বামী হত্যার বিচার, প্রতিবন্ধী সন্তান চাইলো পিতা হত্যার বিচার, ভাতিজা চাইলো চাচা হত্যার বিচার। বাদী পক্ষের অভিযোগ, ছোটর ভাড়াকরা গুন্ডা মোজাম্মেল, মহাবুল, আতিয়ার, কটা, মধু, রসূলসহ বেশ কয়েকজন শহিদের বাড়ির উঠোনে তার স্ত্রী-সন্তানদের সামনে মারধর করে দলেচটকে গলা টিপে নৃশংসভাবে শহিদকে হত্যা করে।