আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা হেলালকে দিনদুপুরে কুপিয়ে খুন

গ্রামের মানিকসহ কতিপয় ব্যক্তি বেশ কিছুদিন থেকে দিয়ে আসছিলো হত্যার হুমকি

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গায় এক বিএনপি নেতাকে দিনদুপুরে খুন করা হয়েছে। শনিবার সকালে ধানক্ষেতে সেচ দেয়ার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে খুন করা হয়। এলাকার কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে বলে হেলালের পরিবারের অভিযোগ। নিহত হেলালুল ইসলাম (৫৫) আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের জুগিরহুদা গ্রামের মৃত একদিল বিশ্বাসের ছোট ছেলে। তিনি ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির নেতা। সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার থানায় মামলা হতে পারে।
পুলিশ ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকালে গ্রাম থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ধানক্ষেতে সেচ দিতে যান হেলাল। একটি পানবরজের পাশে ধানক্ষেতে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় হেলালকে পড়ে থাকতে দেখে গ্রামের এক কৃষক বাড়িতে খবর পাঠায়। জুগিরহুদা ও পার্শ্ববর্তী রামচন্দ্রপুরের কয়েকজন দুইপা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় হেলালকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। জরুরি বিভাগের ডা. শামীম কবির সকাল সোয়া ১০টার দিকে হেলালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত হেলালের স্ত্রী স্কুলশিক্ষক রাজিয়া সুলতানা জানান, গ্রামের হাসিবুল ইসলামের ছেলে মানিকসহ যারা হেলালকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের নাম মৃত্যুর আগে হেলাল নিজে বলে গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেলালকে একটি পানবরজের পাশের একটি ধানক্ষেতে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় হামলাকারীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার দুই পা হাঁটু থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয় হামলাকারীরা। উপর্যুপরি কোপে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণেই হেলালের মৃত্যু হয়েছে বলে ডাক্তারদের ধারণা।
পার্শ্ববতী রামচন্দ্রপুরে হেলালের শ্বশুরবাড়ি। তার কয়েকজন শ্যালক অভিযোগ করে বলেন, জুগিরহুদার হাসিবুল হকের ছেলে মানিক ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জেল ম-লের ছেলে আহসান গত ২৬ মার্চ রাতে ইয়াবা ও গাঁজাসহ স্থানীয় পাঁচকমলাপুর ক্যাম্প পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে হেলালকে হুমকিধামকি দিতে থাকে। মানিকের ধারণা ছিল হেলালই পুলিশে খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিয়েছেন। নিহত হেলালের ছেলে সৌরভ অভিযোগ করে জানায়, মানিক কিছুদিন আগে আমাকেও হুমকি দিয়ে বলেছিলো তোর বাবা ও তোকে কুপিয়ে কেটে ফেলবো। মানিক এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরাই আমার পিতাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছে। ওই খুনিরা এলাকার চিহ্নিত দুষ্কৃতী ও মাদকব্যবসায়ী।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজু জানান, হেলাল খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নির্বাহী সদস্য শরীফুজ্জামান শরীফ জানান, হেলাল বিএনপি নেতা। তবে বর্তমান ইউনিয়ন কমিটিতে তার নাম নেই। হেলালুল ইসলাম হেলাল ওরফে বাবু দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তিনি ছিলেন তিন সন্তানের জনক। বড় মেয়ে শুক্লা বিবাহিত। অন্য মেয়ে রিয়া কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। একমাত্র ছেলে সৌরভ চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। হেলালের দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রী রুশিয়া খাতুন গৃহিণী। দ্বিতীয় স্ত্রী রাজিয়া খাতুন আলমডাঙ্গার সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক।
গতকাল শনিবার দুপুরে হেলালের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে। সেখানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার সোনা, মজিবুল হক মালিক মজু, ওয়াহেদুজ্জামান বুলাসহ জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা হেলালকে একনজর দেখতে যান। বিকেলে নিজগ্রাম জুগিরহুদায় নেয়া হয় হেলালের লাশ। এ সময় অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে গ্রামে। তবে অভিযুক্ত মানিকসহ সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের অনেকেই গাঢাকা দিয়েছেন। গ্রামের অনেকেই জানান, জুগিরহুদা গ্রামটি প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে অভিযুক্তদের অনেকেই পরিবারসহ বাড়িছাড়া। বিকেলে গ্রামে হেলালের লাশ নেয়া হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ ও ওসি (তদন্ত) লুৎফুল কবীর। বাদমাগরিব গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে হেলালকে দাফন করা হয়।
হেলালের ভাতিজা কায়রুল ইসলাম জানান, ‘হেলাল পেশায় রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গ্রামে চাষাবাদও ছিল তার। তিনি ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ। তাকে যারা খুন করেছে তারা কেউই রেহাই পাবে না। তাদেরকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। আমরা এর উচিত বিচার চাই।’ আলমডাঙ্গা থানর ওসি আবু জিহাদ জানান, পুলিশি জাল বিস্তার করা হয়েছে। শিগগিরই খুনিরা ধরা পড়বে। আজ রোববার থানায় হত্যামামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি জানান।