আরো দশ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হবে

 

মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিত্সা সেবার উন্নয়নে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরো ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোগীর সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নার্সের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বেই নার্সরা শুধু রোগীর সেবা করে না, আসলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট তৈরি করে ডাক্তারদের দেন। তারপর চিকিত্সকরা পরীক্ষা করেন। আমাদের দেশেও চিকিত্সা ব্যবস্থা সেই মানে নিয়ে যেতে চাই। স্নাতকোত্তর নার্সিং শিক্ষার জন্য একটি উচ্চতর ইনস্টিটিউশন, প্রতিটি জেলায় নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগে আরো কয়েকটি শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করার আশ্বাস দেন তিনি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০১৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন ৬ হাজার ২২১ জন সহকারী চিকিত্সক আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করবেন। অন্যদিকে বর্তমানে নার্সের পদ রয়েছে ৫ হাজার। এটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এজন্য আরো অন্তত ১০ হাজার নার্স যেন নিয়োগ দেয়া হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের নার্সিঙে স্নাতক কোর্সে ভর্তির সুযোগ দিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগে গ্রাজুয়েট নার্সিঙের সিস্টেমই ছিল না, আমরা এটাতে পরিবর্তন এনেছি।নার্সিং ইনস্টিটিউটও আমরা তৈরি করছি। নার্সিং পেশার মর্যাদা বাড়াতে এই পদগুলোকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও ডিগ্রির জন্য বিদেশে নার্স পাঠানোর সুযোগ করে দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশের চিকিত্সা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। শুধু শহর নয়, গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ যাতে সহজে চিকিত্সা সুবিধা পান, আমরা সে ব্যবস্থা করে দিতে সক্ষম হয়েছি। ব্রেস্ট ফিডিঙের জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা ও উত্সাহ প্রদান এবং মাতৃদুগ্ধ (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ যথাযথভাবে প্রয়োগের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মায়ের দুধ পান করা নবজাত শিশুর অধিকার। পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা বাকারা’র ২৩৩ আয়াতে শিশুকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬ মাস পর্যন্ত শিশুর জন্য মায়ের দুধই একমাত্র পরিপূর্ণ ও নিরাপদ খাবার।

প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেক্টরে তার সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, সারাদেশে প্রায় ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য কমপক্ষে একজন করে মোট ১৩ হাজার ২৫০ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ২৯ ধরনের ওষুধ নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, গত পাঁচ বছরে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার ৪৪০ জন সহকারী সার্জন এবং ১৯৬ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অ্যাডহক ভিত্তিতে ৪ হাজার ১৩৩ জন সহকারী সার্জন নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিগগিরই রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিম অংশে একটি করে আরো দুটি শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬৪টি জেলায় ৬ হাজার ৩৯১ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে ২ হাজার ৯৮৯ জন নিয়োগ পেয়েছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ১ হাজার ৭৮৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে একটি করে শিশু হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে একটি করে শিশু হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া ১ হাজার ২০ জন সাব অ্যাসিসট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১১ সালে শুরু হওয়া এইচপিএনএসডিপি কর্মসূচি ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে জরুরি প্রসূতি সেবা, প্রশিক্ষণ, ইপিআইসহ আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে একজন করে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য প্রতিটি সদর হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সকল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে জাতীয় পুষ্টি সেবার মাধ্যমে শিশুবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে পুনর্শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২০৭টি হাসপাতালে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে।

ব্রেস্ট ফিডিঙের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, গত পাঁচ বছরে ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রচারণা ও সচেতনতার কারণেই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, দেশে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে হয়। এর বেশির ভাগই শিশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।আমরা যদি শতভাগ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে পারি তাহলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

ইতোমধ্যেই নবজাতকের স্বাস্থ্য কৌশলপত্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় পুষ্টিনীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি (বেতনসহ) ৬ মাসে উন্নীত করেছি। সরকারি-বেসরকারি অফিসে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল থেকে কর্মজীবী মায়েদের ভাতা দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে এসব কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ এমডিজি পুরস্কার, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে।এছাড়া বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মানববাহক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইনশাল্লাহ আমরা তার আগেই এটা করতে সক্ষম হবো। আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার একযোগে ৬ হাজার ২২১ জন চিকিত্সক নিয়োগ পাচ্ছেন।মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো চালু থাকলে শিশু উচ্চমানের শক্তি ও আমিষ পায়। মায়েরা যদি শিশু জন্মের একঘন্টার মধ্যে তাদেরকে বুকের দুধ পান করানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন, তাহলে নবজাতক মৃত্যুর হার ৩১ শতাংশ হরাস পেতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মা ও শিশুদের নিয়ে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। পরে তিনি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত পুষ্টিমেলা পরিদর্শন করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিনের সভাপতিতে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক নূর হোসেন তালুকদার, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি এস কে রায়, জাতীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. এম শাহনেওয়াজ বক্তব্য রাখেন।