আমি তখন আকাশে উড়ছি স্বপ্নের মতো

 

 

ঝিনাইদহ অফিস: ‘আমি তখন আকাশে উড়ছি স্বপ্নের মতো। তারপর একটি ঝোপের মধ্যে গিয়ে পড়লাম। ভাবলাম এ কি, কোথায় আসলাম? তারপরই কান্নাকাটির আওয়াজ। আমি উঠতে চাইলাম, কিন্তু মাথা ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথার কারণে উঠতে পারলাম না। মোবাইলে দুর্ঘটনার কথাটি বাড়িতে জানালাম।’

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার রেলক্রসিঙে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বরপক্ষের যাত্রী কৃষ্ণ চন্দ্র দত্ত এভাবেই দুর্ঘটনার কথা বর্ণনা করলেন। তিনি শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের মৃত সুধির দত্তের ছেলে। স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে কৃষ্ণ চন্দ্র দত্ত জানান, তখন ভোর ৩টা বেজে ৩৮ মিনিট হবে। ঘুট ঘুটে অন্ধকার। বাসটি বারোবাজার রেলক্রসিঙে উঠতেই প্রচণ্ড শব্দ। তারপর শূন্যের ওপর ভেসে চলেছি। মনে হচ্ছিলো স্বপ্নের মতোই আকাশে উড়ছি। তারপর এক ঝোঁপের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করি।

তিনি জানান, উদ্ধারকর্মীরা যখন আমাকে তুলে গাড়িতে ওঠায় তখন দেখি ট্রেনটি বাসটিকে দুমড়ে-মুচড়ে অনেক দূর নিয়ে গেছে। বাসের জানালা ও ভাঙাচোরা ফাঁক-ফোকর দিয়ে মানুষ ছিটকে পড়েছে ট্রেনলাইনের ধারে। তাদের কান্না আর আহাজারিতে এক অন্যরকম পরিবেশ। একই গ্রামের মৃত পঙ্কজ সাহার ছেলে নিমাই সাহা জানান, প্রচণ্ড শব্দ হওয়ার পরপরই বাসের যাত্রীরা ট্রেন লাইনের দু ধারে ছিটকে পড়তে থাকে। যারা বাসের মাঝামাঝি স্থানে ছিলেন তারাই বেশির ভাগ হতাহত হয়েছেন। তিনি জানান, বাসটি যখন ট্রেন লাইন ক্রস করছিলো তখন কোনো গার্ড ছিলো না। প্রতিবন্ধকতা না পেয়ে বাস চালক নির্বিঘ্নে বাসটি ট্রেন লাইনের ওপর উঠিয়ে দেয়। এরপর বিকট শব্দে বাসটিকে ঠেলে নিয়ে যায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে।

বাস দুর্ঘটনায় আহত দুলাল চন্দ্রের মেয়ে মিরা রানী জানান, জীবনে এমন নিষ্ঠুর ও ভয়ানক বাস্তবতার মুখোমুখি কোনোদিন হইনি। সৃষ্টিকর্তার কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান জীবন রক্ষা পাওয়ার জন্য।