আমিও বিচার চাই না : অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনের পিতা আবুল কাশেম ফজলুল হক আমি কোনো বিচার চাই না। আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। বক্তব্য দেয়ার পর গতকাল রোববার নিহত ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বন্যা আহমেদ স্বামী হত্যার বিচার চান না বলে তার ব্লগে লিখেছেন।

বন্যা লিখেছেন, দীপনের বাবার মতো আমিও বিচার চাইনা। আমি নিশ্চিত জানি টুটুলের স্ত্রী, দীপনের স্ত্রী, অনন্তের বোন, রাজিব, বাবু, নীলয়ের বন্ধুরাও আর বিচার চান না। বাবাকে ফোন করলে উনি এখনো আশার কথা বলেন, জীবন যে থেমে থাকে না সেটা বলেন, আমাকে অনুপ্রেরণা দেন যাতে আমি থেমে না যাই, আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে বলেন। পিতার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যাই, নিজেকে বলি, ওনারা এরকম ছিলেন বলেইতো একাত্তরে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছিলেন। কিন্তু আমরা পারিনি, আমাদের প্রজন্ম পারেনি, সংখ্যায় ওরা ক্রমাগত বাড়ছে, খালি মাঠে যেভাবে আগাছা বেড়ে ওঠে প্রবল উদ্যমে। আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতাই ওদের এভাবে আগাছার মতো বাড়তে দিচ্ছে।

গত শনিবার অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছিলেন, আমি কোনো বিচার চাই না। আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, উভয় পক্ষ দেশের সর্বনাশ করছেন। উভয় পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। জেল-ফাঁসি দিয়ে কী হবে।

গতকাল রোববার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ক্ষোভ থেকে তিনি ওই বক্তব্য দেননি, বলেছেন নিজের বিবেচনাবোধ থেকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের ভেতর যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হয় তাহলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিচার দিয়ে আইন আদালত দিয়ে আমরা শাস্তি দিতে পারি একজনকে। কিন্তু জাতীয় উন্নতি দরকার। সে জন্য গতকাল যে কথা বলেছি যৌক্তিক বিবেচনা করেই বলেছি। সেটা কোনো আবেগের উত্তেজনার কথা নয়।

শনিবার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ের কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এ প্রকাশনী থেকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো, যিনি নিজেও গত ফেব্রুয়ারিতে একই কায়দায় হামলায় নিহত হন। দীপনের লাশ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানীর লালমাটিয়ায় অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশনা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলা হয়। সেখানে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে হামলাকারীরা।