আমাকে গ্রেফতার করা হয়নি : বাবুল আক্তার

 

স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বাবুল আক্তারকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর টানা প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হলেও হোম এ্যারেস্ট করা হয়েছে কি-না সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বাবুল আক্তারের শ্বশুরের বাসায় নিরাপত্তা জোরদার করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্ত্রী হত্যার বিষয়ে বাবুল আক্তারের কাছে অনেক কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের সময়। এছাড়া স্ত্রী হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য যাচাইবাছাই করতেই বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাবুল আক্তারকে আসামিদের মুখোমুখি করা হয়েছিলো বলেও জানা গেছে। সিসি ক্যামেরার বেশ কিছু ফুটেজও দেখানো হয়েছে।

গভীর রাতে বাবুল আক্তারকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর থেকেই জন্ম নিতে থাকে নানা নাটকীয়তা। বাবুল আক্তার গ্রেফতার হওয়া থেকে শুরু করে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকারসহ নানা খবর ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে শনিবার বিকেল চারটায় বাবুল আক্তার ঢাকার খিলগাঁও শ্বশুরবাড়িতে সন্তানদের কাছে ফেরত যান। তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে নিজেই দাবি করেন। তার পিতা ও ভাইও এমন খবর নিশ্চিত করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন সকালে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু একমাত্র ছেলেকে নিয়ে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন। বাসার অদূরে জিইসি মোড়ের কাছে পৌঁছলে একটি মোটরসাইকেলে দিয়ে তিন যুবক মিতুর গতিরোধ করে। একজন প্রথমে ছেলেকে মিতুর কাছ থেকে সরিয়ে নেয়। এরপর মিতুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ফেলে দেয়ার সাথে সাথে মিতুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় তারা। পরে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় চারজন গ্রেফতার হয়েছে। মামলাটির তদন্তে পুলিশের তরফ থেকে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে অনেক তথ্য দেয়। এমন তথ্য যাচাইবাছাইয়ের কাজ চলছে।

পুলিশ ও পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য যাচাইবাছাই করতেই বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার রাত গভীরে বাবুল আক্তারকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

পরিবারের অন্য সদস্যরা জানান, শুক্রবার রাত সোয়া একটার দিকে প্রথমে পুলিশ বাবুল আক্তারের শ্বশুরবাড়ি যায়। ২২০/এ নম্বর দোতলা বাড়িটি রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন মেরাদিয়া ভূইয়াপাড়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর অঞ্চলে অবস্থিত। সরু রাস্তা। বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি যায় না। বাড়িটি রাস্তা থেকে অন্তত একশ’ গজ দূরে। একটি রিক্সা যাতায়াত করতে পারে। এজন্য পুলিশ মূল রাস্তায় গাড়ি রেখে হেঁটে বাড়িতে পৌঁছে। তারা নিচতলায় দরজার কড়া নাড়ে। এত রাতে পুলিশ দেখে সবাই একদিকে যেমন খুশি হয়, আবার আতঙ্কিত হয়। বাড়ির লোকজনের ধারণা ছিলো নিশ্চয়ই মিতু হত্যার বিষয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে এসেছে পুলিশ। এরপর যথারীতি পুলিশ কর্মকর্তাদের বাসার নিচতলায় বসতে দেয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বাবুল আক্তারের সাথে কথা বলতে চান। বাবুল আক্তার যথারীতি পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বাবুল আক্তারকে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। বাবুল আক্তার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, উপরের নির্দেশ। আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আস্তে আস্তে বাবুল আক্তারের দুই সন্তানসহ বাড়ির সকলে জেগে ওঠেন। এরপর বাবুল আক্তার খানিকটা প্রস্তুত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আবারও তাকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চান। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা উপরের নির্দেশ বলে আবার জানায়। বাবুল আক্তার সকালে গেলে হয় কিনা, শেষ মুর্হূতে তাও জানতে চান। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওপরের নির্দেশ আপনাকে আমাদের সাথে এখনই যেতে হবে। এরপর বাবুল আক্তার পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে রওনা হতে থাকেন। এ সময় বাবুল আক্তারের দুই সন্তানসহ বাড়ির সবাই হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশারফ হোসেন জানান, রাতে খিলগাঁও থানার ওসি মঈনুল হোসেন ও মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন ওপরের নির্দেশে বাবুল আক্তারকে নিয়ে যান।

জানা গেছে, বাবুল আক্তারকে ঢাকার মিন্টু রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়েছিলো। সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তদন্তকারীরা গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য যাচাইবাছাই করতে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃতদের মুখোমুখি করা হয় বাবুল আক্তারকে। এছাড়া সিসি ক্যামেরার বেশ কিছু চিত্র দেখানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তারের পূর্ব শত্রুতা, স্ত্রীর সাথে পারিবারিক সম্পর্ক, জঙ্গী হুমকিসহ নানা বিষয়ে জানতে চান তদন্তকারীরা।

বাবুল আক্তারের পিতা আব্দুল আউয়াল জানান, বিকেল ৪টার দিকে বাবুল ওর শ্বশুরবাড়িতে থাকা ছেলেমেয়েদের কাছে যায়। তিনিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও ওই বাড়িতে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে বাবুল আক্তারকে কি কি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বাবুলের সাথে তার কথা হয়নি। এমনটা দাবি করেছেন, বাবুলের পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যও। তারা বলছেন, বাবুলকে গ্রেফতারের যে খবর ছড়িয়ে পড়েছিলো, তা মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে পুলিশ বাবুল আক্তারকে নেয়ার পর থেকে তাকে আর মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে যায়। তারা থানা পুলিশ থেকে শুরু করে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন বিভাগে যোগাযোগ করতে থাকেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাবুল আক্তারের সাথে মোবাইলফোনে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ হয়। এর পর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উৎকণ্ঠা কেটে যায়।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। বা আটক করা হয়নি। তার কাছে স্ত্রী হত্যার বিষয়ে অনেক কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য যাচাইবাছাইসহ নানা বিষয়ে পর্যালোচনা ও আলাপ-আলোচনা করতেই মূলত তার সাথে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। তাকে হোম এ্যারেস্ট করা হয়েছে কি-না তা তিনি জানেন না।

তবে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, বাবুল আক্তার গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। তার ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এজন্যই বাবুল আক্তারের বাসায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলার তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করতেই বাবুল আক্তারকে ডেকে নেয়া হয়েছিলো। কয়েক আসামির মুখোমুখি করে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় অফিসার্স ক্লাবের অনুষ্ঠানে যান বাবুল আক্তার। সেখানে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকের সাথে দেখা হয়। এর পর শুক্রবার রাতেই পুলিশ বাবুল আক্তারকে নিয়ে যায়।

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার চৌধুরী জানিয়েছেন, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের রহস্য উদঘাটিত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন সাংবাদিকদের কাছে।

জানা যায়, এসপি বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের কাছেই একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করছিলেন। তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করেন। অফিসের কাজে তিনি ঘটনার সময় ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

প্রতিদিনই সাদ্দাম নামের পুলিশ কনস্টেবল বাবুল আক্তারের ছেলে মাহিনকে স্কুলবাসে তুলে দিতেন। ঘটনার পনেরো দিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। এজন্য বাবুল আক্তারের স্ত্রী ছেলেকে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। প্রতিদিন সাধারণত সকাল সোয়া সাতটার দিকে বাবুল আক্তারের ছেলেকে নিয়ে কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন বাড়ি থেকে বের হতেন। স্কুলবাস সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জিইসি মোড়ে পৌঁছত।

নিহতের পরিবারের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে জানান, ঘটনার দিন সকালে নিহত মিতুর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। স্কুলের পরিচয়ে সেই মেসেজে জানানো হয়, জরুরি কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওইদিন আধাঘণ্টা আগে এ্যাসেম্বলী ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগে স্কুলে পৌঁছুতে বলা হয়। এমনকি মেসেজে সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিতে বাস আগে আগেই নির্ধারিত স্থানে পৌঁছবে বলেও ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়। এমন বার্তা পেয়ে স্বাভাবিক কারণেই মেসেজটি স্কুল কর্তৃপক্ষের বলে ধরে নেন বাবুল আক্তারের স্ত্রী। তিনি মেসেজটি স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পাঠানো হয়েছে কি-না, তা যাচাইবাছাই করার প্রয়োজন মনে করেননি। কারণ তার মোবাইল নম্বরটি পরিবার পরিজন, নিকট আত্মীয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ছাড়া তেমন কোন লোকের কাছে ছিলো না। এ কারণে তিনি ছেলেকে নিয়ে আগে আগেই জিইসি মোড়ের দিকে রওনা হন। রওনা হওয়ার পরেই ঘটনাটি ঘটে।

পরবর্তীতে তদন্তকারীরা ক্ষুদে বার্তাটি স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পাঠানো হয়নি বলে নিশ্চিত হয়। ধারণা করা হয়, ক্ষুদে বার্তাটি হত্যাকারীরা পরিকল্পিতভাবে পাঠিয়েছিলো। যাতে মিতু আগে আগে বাসা থেকে বের হয়। আর মিতু সেই ফাঁদে পাও দিয়েছিলেন।

স্ত্রী হত্যার ঘটনায় নিজেই বাদী হয়ে চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় ঘটনার পরদিন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি চট্টগ্রামের বাদুড়তলা এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে গ্রেফতারের কথা জানায়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়।

তদন্তের ধারাবাহিকতায় ৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে ছাত্র শিবিরের সাবেক কর্মী আবু নসুর গুন্নু (৪৬), ১০ জুন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের ঘটনায় মানববন্ধন চলাকালে সন্দেহজনকভাবে ছোরাসহ ইব্রাহিম নামে এক যুবক, ১১ জুন নগরীর বায়েজিদ থানার শীতল ঝর্ণা এলাকা থেকে শাহ জামান ওরফে রবিন (২৮) গ্রেফতার হয়। রবিন হত্যাকাণ্ডের সময় রাস্তার পাশের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে যে যুবককে অনুসরণ করতে দেখা গিয়েছিলো, ওই যুবকই রবিন বলে পুলিশ জানায়। ১২ জুন নসুর ও রবিনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। ১৪ জুন জেএমবি সদস্য বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদকে বাকলিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশ। ফুয়াদকে এসপিপত্মী হত্যার বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আক্তারের পিতা আব্দুল আউয়াল পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুর পিতাও পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। দুই পুলিশ কর্মকর্তা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এজন্য বন্ধুর সাথে বেয়াই পাতেন। দীর্ঘদিন ধরেই মিতু ও বাবুল আক্তারের পরিবারের মধ্যে যাতায়াত ছিল। সেই যাতায়াতের সুবাদে মিতু ও বাবুল আক্তার পরস্পর পরস্পরের পূর্ব পরিচিত। তারই প্রেক্ষিতে দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়। মিতুকে স্মরণে রাখতেই বাবুলের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপার ফাদিলপুরের পরিবর্তে ঢাকার মেরাদিয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দিকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বেশ কিছু জঙ্গী ধরা পড়ে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু লিখিত পরিকল্পনা উদ্ধার হয়। সেই পরিকল্পনায় বেছে বেছে পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও হামলা করা হবে বলে উল্লেখ ছিল। এরপর পুলিশ সদর দফতর থেকে এসপি বাবুল আক্তারকে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা বাড়িয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসপি বাবুল আক্তার অত্যন্ত নিরাপদ ফ্ল্যাট ও এলাকায় পবিবার নিয়ে বসবাস করেন বিধায়, বাড়তি নিরাপত্তা নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর জঙ্গী অপারেশন করেছেন এসপি বাবুল আক্তার। সেসব অপারেশনে বন্দুকযুদ্ধে জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া বাবুল আক্তারের অভিযানে ১৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার ও মাজারে জঙ্গী কর্তৃক ফকির হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, হিন্দু পুরোহিত, খ্রীস্টান ধর্ম যাজক, ব্লগার, প্রকাশক, লেখকসহ মাজারে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিল রয়েছে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীর হত্যাকা-। এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে জঙ্গীরা জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেক হত্যাকাণ্ডে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। বাবুল আক্তারের স্ত্রীর হত্যার স্টাইলের সঙ্গে জঙ্গীদের হত্যার স্টাইল পুরোপুরি মিলে যায়। এজন্য বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যায় জঙ্গীরা জড়িত থাকতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা।