আবুল হোসেন মিলিটারির বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ

গাংনীর মহাম্মদপুর গ্রাম পরিদর্শন করলেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল ইসলাম

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রাম পরির্দশন করলেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম। গতকাল বুধবার বিকেলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করে ভুক্তভোগীদের সাথে মতবিনিময় করেন। গ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। পুলিশ সুপারকে কাছে পেয়ে আবুল হোসেন মিলিটারির বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি দু’পক্ষের গণ্ডগোলের জের ধরে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার ও হামলার আশঙ্কায় জেলে পরিবারগুলো প্রায় মানুষশূন্য ছিলো।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, উভয়পক্ষ শান্তি চায়। তারা আবারো আগের মতো একসাথে বসবাস করতে চায়। সে লক্ষ্যে বিবাদ মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আতঙ্কের মধ্যে যারা আছে তাদেরকে বাড়ি ফিরতে বলা হয়েছে। গণ্ডগোলের পূর্বমূহূর্ত পর্যন্ত যে অবস্থায় ছিলো এখন সেই পরিবেশ থাকবে। মামলাগুলো কীভাবে মীমাংসা করা যায় তা আগামী ২১ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের লোকজন সাথে নিয়ে বসা হবে। তবে গ্রামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে পুলিশ সুপারকে কাছে পেয়ে মনের ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী জেলে পরিবারের নারী-পুরুষ। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে আবুল হোসেন ওরফে আবুল মিলিটারির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, আবুল হোসেনকে এক সময় তারা প্রতিপক্ষের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। রাত জেগে গ্রামপাহারা করেছেন। কিন্তু দরিদ্র জেলেদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তিনি মৎস্যজীবী সমতিরি মধ্যে ঢুকে অর্থ লোপাট করেছেন। এই অর্থ ফেরত চাইলে অসহায় জেলেদের জীবনে নেমে আসে মামলার খড়গ। সম্প্রতি একটি গণ্ডগোলের সূত্র ধরে তিনি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে তিনটিসহ জেলেদের নামে চারটি মামলা দায়ের করেছেন। দু’পক্ষের গণ্ডগোলের সময় কোনো প্রকার বিস্ফোরণের ঘটনা ছাড়াই তিনি মিথ্য মামলা দায়ের করেন। এ কারণে গ্রামবাসীর রোষানলে পড়েছেন আবুল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা। এসব মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে বেশ কিছুদিন ধরেই গ্রামের মানুষ বাড়িছাড়া।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, চরগোয়ালগ্রাম মরা নদীর মহাম্মদপুর অংশের মৎস্যজীবী সমিতিতে ৫২ জন সরকারি নিবন্ধনকৃত মৎস্যজীবী শেয়ার সদস্য রয়েছেন। এসব সদস্যদের মধ্যে আবুল হোসেন মিলিটারি একাই ১২টি শেয়ার নিয়েছেন বিভিন্ন নামে বেনামে। তিনি নিজে মৎস্যজীবী না হয়েও সমিতির নিয়ন্ত্রণ কর্তা। এতে প্রকৃত জেলেরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ আত্মসাতের প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদীদের জীবনে নেমে আসে মামলার বোঝা। কোনো কারণ ছাড়াই জেলেদেরকে সমিতিতে বাদ দেয়া হয়েছে। আবুল হোসেনের আক্রোশের শিকার হয়েছেন অর্ধশতাধিক জেলে।

ভুক্তভোগীরা আরো জানান, আবুলের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় আসামি গ্রেফতার করতে এসে গত কয়েক দিন আগে পুলিশের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়। এতে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় জেলে পরিবারের ছয় নারীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে জেলা কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। নারীদের বিরুদ্ধে মামলার কারণে জেলে পরিবারগুলোর নারী সদস্যরাও এখন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। অন্যদিকে এখনো হাজতে রয়েছেন গ্রেফতার হওয়া ছয়জন।

সমস্যা সমাধানে পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়ে পুলিশ সুপার গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে আরো বলেন, উভয়পক্ষ যদি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখে তাহলে বিবাদ মীমাংসা সম্ভব হবে। বল প্রয়োগ করে নয়, সহমর্মিতা নিয়ে একসাথে বসবাসের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পরিদর্শনের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মহিলা সংসদ সদস্য সেলিনা আখতার বানু ও গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন।

এদিকে মহাম্মদপুর গ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাতে বিবাদ মীমংসার লক্ষ্যে গতকাল সকালে পুলিশ সুপারের সাথে তার কার্যালয়ে মতবিনিময় করেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধ মকবুল হোসেন। সাথে ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম ও গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীসহ নেতৃবৃন্দ।