আবাসিকে তিন বাণিজ্যিকে চারগুণ ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব

 

স্টাফ রিপোর্টার: আবাসিক এলাকার জমি অধিগ্রহণ করলে তিনগুণ এবং বাণিজ্যিকের ক্ষেত্রে চারগুণ ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। আবার পঞ্চাশ বিঘার ওপর জমি অধিগ্রহণ করা হলে অনুমতি লাগবে সরকারের। তবে জমি অধিগ্রহণে কেউ বাধা দিলে এ অপরাধের জন্য তাকে ছয় মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয়দণ্ডে দণ্ড দেয়া যাবে। তবে, অধিগ্রহণ করা যাবে না সেনানিবাস কিংবা ধর্মীয় উপাসনালয়ের জমি বা স্থাপনা।
স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ এবং হুকুম দখল আইন-২০১৬ এর খসড়ায় এসব বিধিবিধান যুক্ত করা হয়েছে। শিগগির আইনটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় পাঠানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ আইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ মাসেই আরেকটি বৈঠকের পর তা মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। প্রস্তাবিত আইনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে আলাদা ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে। যথাক্রমে তিনগুণ এবং চারগুণ। তবে আইনে ধর্মীয় উপাসনালয় যেমন মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও শ্মশানঘাটের জমি বা স্থাপনা অধিগ্রহণের বাইরে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমি গ্রহণের নোটিশ জারির আগের এক বছরের মধ্যে যে মালিকের নামে জমির দলিল নিবন্ধন করা হয়েছিল তিনিই পাবেন ক্ষতিপূরণ। এ ক্ষেত্রে বর্তমান বাজার মূল্যে নয়, নিবন্ধিত দলিলে যে মূল্যে নির্ধারণ আছে তার ২০০ গুণ অর্থাৎ তিনগুণ বেশি ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ দুই বছর ধরে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আইনের খসড়াটি লালফিতায় বন্দি ছিল। সম্প্রতি মন্ত্রীর নির্দেশে নতুন করে এটার পর্যালোচনা শুরু হয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ স্টেকহোল্ডারদের মতামত চূড়ান্ত করেছে। আইনটি মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর বিল আকারে পাসের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে। বিলটি পাস হলে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর হবে। এর মাধ্যমে বিদ্যমান স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও সম্পত্তি হুকুমদখল অধ্যাদেশ-১৯৮২ (সামরিক অধ্যাদেশ) বিলুপ্ত হবে। পাশাপাশি নতুন আইনটি ১৯৮২ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। ক্ষতিপূরণের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, বাজার মূল্য নির্ধারণের সময় ডিসিরা ওই এলাকার পারিপাশ্বিক এলাকার সমশ্রেণির এবং সমান সুবিধাভুক্ত সম্পত্তির ৩ ধারার নোটিশ জারির পূর্বের ১২ মাসের গড় মূল্য নির্ধারণ করবেন। কোনো শ্রেণিভুক্ত জমির ক্রয়-বিক্রয় দলিল না পাওয়া গেলে ওই আইনের বিধির আলোকে মূল্য নির্ধারণ হবে। আর আবাসিক এলাকার অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির বাজার মূল্যের ওপর সরকার অতিরিক্ত শতকরা ২০০ ভাগ ক্ষতিপূরণ দেবেন। তবে শর্ত থাকে যে লাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (যেমন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাজার দরের ওপর অতিরিক্ত শতকরা ৩শ ভাগ অর্থাৎ চারগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এক সংস্থার অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি অন্য সংস্থার অনুকূলে হস্তান্তরের সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির তারিখ থেকে উপধারা ১(ক) অনুযায়ী বাজারদর নির্ধারণ হবে।
অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি ব্যবহার সংক্রান্ত আইনের ১৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, যে কাজের জন্য জমির অধিগ্রহণ করা হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া বিক্রয়, লিজ, এওয়াজ কিংবা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।
অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থে বিবেচনায় ৫০ বিঘা পর্যন্ত সম্পত্তি অধিগ্রহণের প্রয়োজন মনে করলে ডিসিরা ভূমি মালিককে নোটিশ দেবেন। নোটিশ গ্রহীতাকে জবাব দাখিলের জন্য ১৫ দিন সময় দেয়া হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এ সময় হবে ৭ দিন। এর মধ্যে নোটিশ গ্রহীতা ভূমি মালিক বা প্রতিষ্ঠানকে ডিসির কাছে হাজির হয়ে সম্পত্তিতে তার দাবির পরিমাণ এবং ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারবেন।
এরপর জেলা প্রশাসক একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে সিদ্ধান্তের জন্য পাঠাবেন। নোটিশ গ্রহীতার কোনো আপত্তি না থাকলে ১০ দিনের মধ্যে এবং বিভাগীয় কমিশনারের লিখিত অনুমতি পাওয়া গেলে ৩০ দিনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে। আর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য ডিসি ১৫ দিনের মধ্যে সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। আর ৫০ বিঘার বেশি সম্পত্তি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে ডিসিরা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠাতে হবে।
আইনের ৪০ ধারাতে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, এই আইন এবং ইহার অধীন প্রণীত বিধি বলে অনুমোদিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির কাজে ইচ্ছাকৃত বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রস্তাবিত আইনের ৪৯ (২) ধারাতে বলা হয়েছে, এই আইনের দুটি ভাষ্য থাকবে ইংরেজি ও বাংলা। দুটি ভাষার মধ্যে অস্পষ্টতা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষাটি প্রাধান্য পাবে।