আবারো বাড়লো বিদ্যুতের দাম : ডিসেম্বর থেকে কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়লো। এবার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আগামী ডিসেম্বর থেকে নতুন এ হার কার্যকর হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা কারওয়ান বাজারে বিইআরসিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

দরিদ্র গ্রাহকদের (লাইফ লাইন) ক্ষেত্রেও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তবে এত দিন তাদের যে ন্যূনতম বিল (মিনিমাম চার্জ) দিতে হতো সেটা আর থাকছে না। মিনিমাম চার্জ তুলে দেয়ার ফলে ৩০ লাখ দরিদ্র গ্রাহক উপকৃত হবে। আর সাত লাখ লাইফ লাইন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম কিছুটা বাড়বে। পাইকারি ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে দাম না বাড়ার কারণ, সরকার সেখানে ভর্তুকি দেবে। তাতে বছরে ৩৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। বিদ্যুতের উrপাদন ব্যয়কে পাইকারি দাম হিসেবে ধরা হয়। আওয়ামী লীগ  ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মোট আটবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়িয়েছিলো সরকার। তাতে মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়ে ২০ টাকা; ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারে খরচ বাড়ে কমপক্ষে ৩০ টাকা। চলতি বছরের মার্চে বিভিন্ন পর্যায়ে গ্যাসের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, বিদ্যুত খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের দামও সমন্বয় করা প্রয়োজন। গত সেপ্টেম্বরে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। সেখানে পাইকারিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব আসে। ডিপিডিসি গ্রাহক পর্যায়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, ডেসকো ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ওজোপাডিকো ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, আরইবি ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং পিডিবি ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। নিয়মানুযায়ী, গণশুনানি করার পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ৩৪ (৬) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিদ্যুতের পাইকারি  (বাল্ক) মূল্য হার প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য কমিশনে আবেদন করে। এছাড়া ওই ধারা মোতাবেক বিদ্যুত বিতরণ সংস্থা হিসেবে বিউবো, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ওয়েস্টজোন পাউয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এবং নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)বিদ্যুতের খুচরা মূল্য হার পরিবর্তন বা সমন্বয়ের জন্য কমিশনের আবেদন করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিশন বিদ্যুত সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর আবেদনের ওপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত গণশুনানি গ্রহণ করে। শুনানি পরবর্তী স্টেকহোল্ডারদের মতামত এবং গণশুনানিতে প্রাপ্ত মতামত ও তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। মূল্য হার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সব শ্রেণির গ্রাহকের স্বার্থ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিক প্রভাব, বিত্তহীন ও নিম্নবিত্তসহ সব গ্রাহকের ওপর আর্থিক চাপ হ্রাস, সারাদেশে বিদ্যুতের অভিন্ন মূল্য হার, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ এবং সর্বোপরি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ধারা ২২(খ) ও ৩৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্য হার বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিদ্যুত বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানিসমূহের নিট বিদ্যুত বিতরণ খরচ বৃদ্ধি বিবেচনায় সব বিদ্যুত বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানির বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার গড়ে শূন্য দশমিক ৩৫ টাকা/কি.ও.ঘ. বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই মূল্যহার ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব মুহ. মাহবুবর রহমান স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদ্যুতের ন্যূনতম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে মোট গ্রাহকের ১৩ শতাংশ অর্থাr ৩০ লাখ লাইফ-লাইন গ্রাহকের (০-৫০ ইউনিট) বিদ্যুত বিল হ্রাস পাবে। তাছাড়া বাপবিবোর প্রায় ৬০ লাখ (মোট গ্রাহকের ২৫ শতাংশ) লাইফ-লাইন গ্রাহকের জন্য খুচরা বিদ্যুতের মূল্য হার অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাr সারাদেশে মোট গ্রাহকের প্রায় ৩৮ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুত বিল বৃদ্ধি পাবে না।