আপন ছন্দে টাইগাররা : সিরিজে সমতা

আবার মেতে উঠলো মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম : জয়ের আমেজ সারা দেশে

 

স্টাফ রিপোর্টার: কয়েকটা দিন বড় বিমর্ষ, নিস্তব্ধতায় কেটেছে মিরপুরের দর্শকদের। সারা দেশেই ক্রিকেট প্রেমিদের মুখ ছিলো ভার। অভ্যাস হয়ে যাওয়া উত্সবটা যেন ক’দিনের জন্য উধাও হয়ে ছিলো। অবশেষে আবার ক্রিকেটাররা জোয়ার ফেরালেন গ্যালারিতে। জয় উৎসবের আমেজ ছড়ালো সারা দেশে। বল হাতে নাসির, মুস্তাফিজদের তোলা জোয়ারের স্রোতে বান ডাকলো সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। দুইয়ে মিলে বাংলাদেশকে আট বছর পর এনে দিলেন আফ্রিকার বিপক্ষে এক জয়। ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করলেন সৌম্য। আগে ব্যাট করে মাত্র ১৬২ রানে গুঁড়িয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকতে মাহমুদউল্লাহ ফিফটি করে আউট হয়ে গেলেও সৌম্য সরকারের অপরাজিত ৮৮ রানে ভর করে ৭ উইকেটের অবিস্মরণীয় এক জয় পেলো বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের পর এটাই দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে স্বাগতিকদের বিপক্ষে আবারো জয় পেয়েছে যুবারা; এদিকে সিনিয়ররা ফিরলো সিরিজে। লক্ষ্যটা মাত্র ১৬৩ রানের। তারপরও শুরুতেই তামিম ইকবালের হঠকারী শট বাংলাদেশকে বেশ একটা ধাক্কা দিয়েছিলো। দলীয় মাত্র ৫ রানে ব্যক্তিগত ৫ রানই করা তামিম রাবাদার বল বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বল ভেতরে টেনে বোল্ড হন। এরপর হঠাত্ করেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা লিটন ১৪ বলে ১৭ রান করে ওই রাবাদার বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন। ২৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে একটু শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। সেখান থেকেই প্রবল বিক্রমে দলকে টেনে তোলেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ। শুধু প্রতিরোধ নয়, পাল্টা আক্রমণে এ দুজন, বিশেষ করে সৌম্য একেবারে ছন্নছাড়া করে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং। মাহমুদউল্লাহ ৬৪ বলে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সৌন্দর্যপূর্ণ ৫০ রানের ইনিংস খেলে শেষ বেলায় আউট হন। তবে অন্য প্রান্তে ৭৯ বলে ১৩টি চার ও একটি ছয়ে সাজানো ৮৮ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন সৌম্য সরকার।

এর আগে কাল বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তরুণ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। দারুণ এক ডেলিভারিতে কুইন্টিন ডি কককে সাব্বির রুম্মনের তালুবন্দী করেন তিনি। অন্যপ্রান্তে হাশিম আমলাকে ফেরান রুবেল। প্রথম ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া রুবেল ঘন্টায় প্রায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে ছোঁড়া এক বলে উড়িয়ে দেন আমলার উইকেট। সর্বশেষ ১১ ম্যাচে প্রায় ৬০ গড়ে রান করা রুসো কাল বেরোতেই পারেননি চাপ থেকে। ২৪ বল খেলে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছেন মাত্র চার রান করে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ফেরান মিলারকে। ফ্যাফ ডু প্লেসিস একপ্রান্ত আগলে থাকলেও অপর প্রান্তে সফরকারীরা উইকেট খোয়াতে থাকে নিয়মিত বিরতিতে। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে এর আগে কখনোই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অলআউট হয়নি প্রোটিয়ারা। গতকালের ম্যাচটির আগে খেলা ১৫টি ওয়ানডের পরিসংখ্যান ছিলো এমন। নাসির-মুস্তাফিজদের দুর্দান্ত বোলিঙে মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সফরকারী দলটিকে ১৬২ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। বলা বাহুল্য, এটাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের সর্বনিম্ন রান। শুধু তাই নয়, ২০০৯ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১১৯ রানে অলআউট হবার পর কখনোই এত কম রানে অল আউট হয়নি তারা। ম্যাচে বাংলাদেশি বোলারদের আগ্রাসন বোঝাতে পারে আরেকটি তথ্য। ইনিংসের ৭ থেকে ৩২ ওভারের মধ্যে মাত্র দুটি বাউন্ডারি হাঁকায় প্রোটিয়ারা। এ সময়ে তাদের রান রেট ছিল মাত্র ২.৮!

তিনটি করে উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ-নাসির ছিলেন সফলতম বোলার। নয় ওভার বল করে রুবেলের দু উইকেট আসে ৩৪ রান খরচে। অন্যদিকে সাকিব কোনো উইকেট না পেলেও দশ ওভারের কোটা পূর্ণ করতে খরচ করেন মাত্র ৩০ রান। ডু প্লেসিসের ৪১ ছিল প্রোটিয়াদের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। সাত জন ব্যাটসম্যান ফিরেছেন ১৩’র নিচে রান করে! আক্রমণাত্মক বাংলাদেশের সাফল্য বোঝাতে আর কিছু বলার দরকার আছে! ফারহান বেয়ারদিনকে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট করে দারুণ এক ব্যক্তিগত মাইলফলকের কাছাকাছিও পৌঁছে যান মাশরাফি। ওয়ানডেতে আবদুর রাজ্জাকের পর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দু’শ উইকেট নিতে মাশরাফির প্রয়োজন আর একটি মাত্র উইকেট। অন্যদিকে, এ সিরিজের প্রথম দু ম্যাচেই উইকেট শূন্য থাকা সাকিবের সংগ্রহ ১৯৮। সবার উপরে থাকা রাজ্জাকের শিকার ২০৭টি।