আন্দোলনের হুমকির জবাবে প্রধানমন্ত্রী : মাঠের খেলা মাঠেই হবে

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবলেছেন, ‘মাঠের খেলা মাঠেই হবে। ফুটবল মাঠে কে কয়টা গোল দেয়, সেটা সেখানেইদেখা যাবে। মাঠে নামুক না। মাঠে আওয়ামী লীগ আছে, মানুষও আছে।’লন্ডনসফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসবকথা বলেন। সংলাপ প্রসঙ্গটি আগের মতোই নাকচ করে দেন তিনি। সরকারি বাসভবনগণভবনে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীরবক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শনিবার বেলা ১টায় এক সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপির পক্ষথেকে বলা হয়, তারা সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে শান্তি ওস্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সরকার যদি এই দাবি অগ্রাহ্য করে, সব দলেরঅংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচন না দেয়, তাহলে তুমুল যুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাবে।প্রধানমন্ত্রীযুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং ইউনিসেফের নির্বাহীপরিচালক অ্যান্থনি লেকের বিশেষ আমন্ত্রণে ২১ থেকে ২৩ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠিতপ্রথম গার্ল সামিটে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

সাংবাদিকদেরবিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদেরকাছে থাকা, জামায়াতের সাথে আঁতাত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ঈদের পর বিরোধীদলের আন্দোলনের হুমকিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

যুক্তরাজ্যনির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি: প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার ৫জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি। তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেস্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো দ্বিধা ছিলো না।
৫ জানুয়ারিরনির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার অস্বস্তিতে আছে- বিভিন্ন পত্রিকায় এ বিষয়েপ্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই নয়, দু-একটি পত্রিকা লিখেছে।
প্রধানমন্ত্রী এ কথা বললেও যুক্তরাজ্য সরকারেরওয়েবসাইটে একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত জানুয়ারিরসংসদ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়নির্বাচিত হওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্যরাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমেরস্বাধীনতার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে। ২২ জুলাই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীরকার্যালয় এ বক্তব্য প্রকাশ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘লন্ডনে আমার যাওয়াটাএকটু সমস্যা ছিলো। আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীযখন দাওয়াত দিলেন, একজন মন্ত্রী ফোন করলেন, তখন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।যেহেতু মেয়েদের ব্যাপার এবং প্রথম গার্ল সামিট, সেহেতু এই সিদ্ধান্তনিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে যাব, নির্বাচন নিয়ে একটু আলোচনা হবেই।উনার বক্তব্য ছিলো, ইলেকশন যা হয়েছে, হয়েছেই। পেছনে আর তাকাতে চান না। উনিফরোয়ার্ড লুকিং। সামনের দিকে এগোতে চান। কাজেই ইলেকশন যে পার্টিসিপেটরি, কিছু আনকনটেস্টেড হয়েছে এসব কথা যেকোনো সময় যেকোনো আলোচনায় আসতে পারে।তাদের ওয়েবসাইটে বিষয়টি তুলে ধরেছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের যদি বাংলাদেশ সরকার সম্পর্কে কোনো দ্বিধা থাকতো, তাহলেতাকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বারবার ফোন করে দাওয়াত দিতেন না। ব্রিটিশপ্রধানমন্ত্রী তাকে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজেই অভ্যর্থনা জানান এবংসেখানে তিনি বৈঠকে অংশ নেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

বিচারপতিদেরঅপসারণের ক্ষমতা: শেখ হাসিনা বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সামরিকশাসকেরা করেছিলেন। সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতেথাকলেও পরে জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন।বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পরে দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলেরকাছে।শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে জিয়ার শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করাহয়েছে। পরে আমরা একটি সর্বদলীয় বিশেষ কমিটি করে সংবিধান সংশোধন করি। তখনোবিষয়টি উঠে এসেছিলো। বর্তমানে আইন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ অনেকেই এটাসংশোধনের পক্ষে মতো দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবীশাহদীন মালিক বলেন, পঁচাত্তরের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থসংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছেনেয়া হয়। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপরসংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সুপ্রিমজুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে দেয়া হয়। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান।শাহদীনমালিক বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরাটাই যদি যুক্তি হয়, তাহলে অনেককিছুই বদলাতে হবে। তাছাড়া এখনকার সংসদে ব্যবসায়ীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ; আইনজ্ঞ ওদক্ষ রাজনীতিকের অভাব রয়েছে এবং এই সংসদে আইন নিয়ে খুব একটা আলোচনাও হয়না। এমন একটি সংসদের কাছে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়ার কারণ দেখি না।’
জামায়াতেরাথে আঁতাত প্রসঙ্গ: জামায়াতের সাথে সরকারের আঁতাতের গুঞ্জন নিয়ে একপ্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঁতাতের রাজনীতি কোন দুঃখে করতে যাব?আরজামায়াতের কাছ থেকে পাওয়ার কী আছে?যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। বিচার শেষহলে তা কার্যকর করবে নির্বাহী বিভাগ। আমি তো আর যুদ্ধাপরাধীদের ধরে এনেফাঁসি দিতে পারবো না।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরবলেন, ‘আমরা চাই না, প্রধানমন্ত্রী কাউকে ধরে এনে বিচার করুন।কিন্তু আমরা চাই, দ্রুত বিচার শেষ করা হোক। এ জন্য ট্রাইব্যুনালের ঘাটতি ওঅপূর্ণতাগুলো দূর করতে হবে। কিন্তু বিচার-প্রক্রিয়া, ট্রাইব্যুনালেরজনবল, নিরাপত্তা ও রসদের যে হাল, তাতে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, বিচার আর হবেনা। ২০১৩ পর্যন্ত বিচারের যে গতি ছিলো, তা এ বছরে স্তিমিত হয়ে পড়েছে।’