ছাত্র মন্ত্রী পরিষদ : আন্দুলবাড়িয়ায় বিশৃঙ্খলায় নির্বাচন বানচাল : ভেড়ামারায় একছাত্রকে ছুরিকাঘাত

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ দেশের সিংহভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসায় গতকাল সোমবার স্টুডেন্টস কেবিনেট বা ছাত্র মন্ত্রীপরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিরতিহীনভাবে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বহিরগাতদের হামলায় নির্বাচন বানচাল হয়ে গেছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল কেবিনেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রের ছুরিকাঘাতে অপর ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যেক মাধ্যমিক ও দাখিল মাদরাসায় একটি করে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনার অংশ হিসেবে গতকাল মাধ্যমিক ও দাখিল মাদরাসায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যে কেউই প্রার্থী হওয়ার যোগ্য। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণি থেকে কমপক্ষে ১জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। ৫টি শ্রেণিতে ৫ জন নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত যে কোনো ৩ শ্রেণির ৩ জন নির্বাচিত হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের শাখা বা শিফট চালু থাকলে প্রতি শাখা বা শিফটের জন্য একটি স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠন করা যাবে। এক বছর মেয়াদে ছাত্র মন্ত্রী পরিষদ বা স্টুডেন্টস কেবিনেট দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচিত পদগুলো হলো পরিবেশ সংরক্ষণ, পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সহপাঠ কার্যক্রম, পানিসম্পদ, বৃক্ষ রোপণ ও বাগান তৈরি, দিবস ও অনুষ্ঠান উদযাপন, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন এবং আইসিটি। এরকমই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গতকাল নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে নিজ নিজ বিদ্যালয় বা মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। আর ভোটার ছিলো ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুজন নির্বাচন কমিশনার, ১ জন করে পোলিং, প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম চলে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করার লক্ষ্যে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’ গঠনের এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি নির্বাচন সম্পর্কে ধারণা লাভ হবে। এবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৭টি দাখিল মাদরাসায় ভোটগ্রহণের কার্যক্রম চলে। তবে গতকাল সকল বিদ্যালয়ের ফলাফল দেয়া সম্ভব না হলেও  মঙ্গলবার সকালে তা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

জীবননগর ব্যুরো/আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের হামলায় ছাত্র কেবিনেট নির্বাচন বানচাল হয়ে গেছে। পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে গতকাল সোমবার দুপুরে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।  এ ব্যাপারে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করাসহ ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুষ্ঠুভাবে স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সকাল ৯টা থেকে আন্দুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র কেবিনেটের নির্বাচন শুরু হয়। দুপুরের দিকে হঠাৎ করে ২০/২২ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আশরাফুজ্জামান টিপুকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভয়ে বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিকাইল হোসেন নির্বাচন স্থগিত করে দেন। স্থানীয়রা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, আন্দুলবাড়িয়া বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনে হাঙ্গামা সৃষ্টির অভিযোগে বহিরাগত এক যুবককে থাপ্পড় মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে প্রকাশ্যে ছাত্র ও শিক্ষকদের সামনে শারীরিকভাবে  লাঞ্ছিত করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্র মিকাইল হোসেন জরুরি সভাশেষে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। বহিরাগত যুবকদের হামলায় বিদ্যালয়ের সভাপতিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দ, সুধী ও শিক্ষকবৃন্দ জরুরি সভায় মিলিত হন। সভায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়ে জীবননগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার নিকট লিখিত নালিশি অভিযোগ দাখিল করে এমপি, জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুলিপি দেয়া হয়েছে। অপরদিকে থাপ্পড়ের আঘাতে আহত যুবক নিশানকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার নিকটজনেরা। পাল্টা অভিযোগ তুলে অভিযুক্ত যুবকরা অভিন্ন ভাষায় বলেছে, হাঙ্গামা নয় বিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট ও প্র্যাকটিক্যাল খাতা নিতে গেলে সভাপতি নিজেই জামার কলার চেপে ধরে চড়থাপ্পড় মেরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেয়। তবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা সত্য নয় বলে অভিযুক্ত যুবক মির্জ্জা প্লাবন দাবি করছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসএম আশরাফুজ্জামান টিপু এক প্রশ্নের উত্তরে থাপ্পড় মারার ঘটনা স্বীকার করে জানান, আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে নিশান (২৪) বিদ্যালয়ের সীমানা পাঁচিল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। হাঙ্গামা সৃষ্টি করে নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা চালায়। উগ্র আচরণ ও বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টির কারণেই যুবককে থাপ্পড় মেরে গেট খুলে বাইরে বের করে দেয়ার সময় মির্জ্জা প্লাবন, পিয়াস ও শান্তসহ আরো কয়েক যুবক অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। খবর পেয়ে জীবননগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।

অপরদিকে কাশিপুর মাধ্যমিক, আন্দুলবাড়িয়া বহুমুখি মাধ্যমিক বালিকা, শাহাপুর মাধ্যমিক ও পাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জীবননগর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জীবননগর বালিকা বিদ্যালয়, শাপলাকলি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গয়েশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ধোপাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শিংনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খয়েরহুদা কাশেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উথলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উথলী বালিকা বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়িয়া বালিকা বিদ্যালয়, কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শাহাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিসিকেএমপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাসাদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাসাদাহ বালিকা বিদ্যালয় ও মিনাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কানাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এ নির্বাচনে ৪৫৭ ভোটারের মধ্যে ৩৮৯ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ৮টি পদের বিপরীতে মোট ২০ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছে শাখাওয়াৎ হোসেন (২৫৯), খালিদ হাসান (২২৮), নাসিম রেজা (১৮৮), মাসুদ রানা (১৮০), আহসান হাবীব (১৭৯), আশিকুর রহমান (১৬৯), আব্দুর রশিদ (১৫৯) ও নাহিদ হাসান (১১১)।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা উত্তর নারায়নপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রী শ্রেণি প্রতিনিধি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচিতরা হলো ৭ম শ্রেণির মেহেদী হাসান, ১০ম শ্রেণির মারুফ হোসেন, ৮ম শ্রেণির ফারজানা আক্তার, ৭ম শ্রেণির মেহেরুন আক্তার, ৬ষ্ঠ শ্রেণির অনামিকা, নবম শ্রেণির সুজন মিয়া ও ১০ম শ্রেণির অম্বিকা কর্মকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মো. শাকিল আহাম্মদ।

অপরদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৪ জন ছাত্রছাত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচিতরা হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণির লিমন হোসেন, ৭ম শ্রেণির সুমাইয়া আক্তার মিরা, ৮ম শ্রেণির তানজিলা আক্তার তৃষ্ণা, ৯ম শ্রেণির রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও দশম শ্রেণির সুমন মিয়া।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভেড়ামারা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল ক্যাবিনেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রের ছুরিকাঘাতে অপর ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১টায় স্কুল চত্বরে ১০ম শ্রেণির রাকীন আহমেদ নামের ৯ম শ্রেণির ছাত্র নবনির্বাচিত ক্যাবিনেট মেম্বার শান্ত হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। আহত শান্তকে প্রথমে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। স্কুলের প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ভেড়ামারা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল ক্যাবিনেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে ২ ছাত্রের মধ্যে বাগবিতণ্ডা  চলে আসছিলো। গতকাল নির্বাচনে ৮জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। এর মধ্যে ৯ম শ্রেণির ছাত্র শান্তও নির্বাচিত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্র রাকীন টিফিনের বিরতির সময় স্কুল চত্বরেই শান্তকে হুমকি দেয়। এতে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রাকীন পকেট থেকে ধারালো চাকু বের করে শান্তর পেটে আঘাত করে। এতে শান্ত রক্তাক্ত হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে স্কুলের শিক্ষকরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে।