আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধে মন্ত্রণালয়ের সম্মতি

 

স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে (এবিটি) নিষিদ্ধ করার সারসংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজকালের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদের কারণে এ নিয়ে মোট ৭টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করল সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

আল কায়দা-আনসারুল্লাহ বাংলা-১৩ নামের একটি সংগঠন গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ চার শিক্ষক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদরদফতর এক চিঠিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। তাতে বলা হয়- আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের চেয়েও বড় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তারা আল-কায়দার মতাদর্শ অনুসরণ করে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু করে।

২১ মে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি তৎপরতার কারণে শিগগিরই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করা হবে। এর তিন দিনের মাথায় তিনি এ সংক্রান্ত নথিতে অনুমোদন দিলেন। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে সারাদিন ধরে চলে নথি চালাচালি। এর আগে সংগঠন নিষিদ্ধ করার সময় আইনশৃংখলা সংক্রান্ত কোর-কমিটির বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার নজির রয়েছে। পাশাপাশি কোর-কমিটির বৈঠক ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমেও সংগঠন নিষিদ্ধ করার উদাহরণও রয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বেলায় কোন ধরনের নিয়ম অনুসরণ করা হবে তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলো মন্ত্রণালয়। অবশেষে উভয় নিয়ম উল্লেখ করে সারসংক্ষেপ তৈরি করে তাতেই অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০০৫ সালে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি বি) ও শাহাদাত আল হিকমাতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়।

সূত্র মতে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম একটি সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন। ২০১৩ সাল থেকে সংগঠনটি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যাপক পরিচিতি পায়। বাংলাদেশের যুবকদের উগ্রপন্থী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে জিহাদের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ায় সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। সংগঠনটি তাদের মতাদর্শ প্রচারের জন্য মসজিদকেও ব্যবহার করে থাকে। সংগঠনটির হামলার মূল লক্ষ্য হল মুক্তচিন্তার অনুসারী, ব্লগার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনা জেলার একটি মসজিদে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় সংগঠনটির নেতা মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি তারা ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করে তারা। এ হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে, যারা পরে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। একই বছরের ১৪ জানুয়ারি ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে এবং ৭ মার্চ সানিউর রহমানকে হত্যার উদ্দেশে হামলা চালানো হয়। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি তারা মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীর ওপর হামলা চালায়। এতে অভিজিৎ রায় নিহত ও তার স্ত্রী গুরুতর জখম হন। ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামটিও ইরাকি আল-কায়দার আনসার উল ইসলামের অনুকরণে নেয়া। তবে বাংলাদেশী এ গোষ্ঠী আধ্যাত্মিক নেতা মানেন ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়দার নেতা আনওয়ার আওলাকিকে। আল-কায়দা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (আরব উপদ্বীপ) নামে সক্রিয় এ গোষ্ঠীর প্রধান আওলাকি ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) হামলায় ইয়েমেনে নিহত হন।