আনছার আলীকে শুধু বটিকা নয় ভাতের সাথে শাদা পাউডারও খেতে দেন রোজিনা

ময়নাতদন্ত শেষে দামুড়হুদার বিষ্ণুপুরে দাফন : কথিত কুয়েতি জিন ভর করা কবিরাজকে জেলহাজতে প্রেরণ

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: আনছার আলীকে শুধু গাছড়ার বটিকা দিয়েই মারা হয়নি, ভাতের সাথে শাদা পাউডারও খেতে দিয়েছিলেন কুয়েতি জিন ভর করা রোজিনা খাতুন। সাথে ছিলো ষড়যন্ত্রকারী মুকুল। আনছার আলীর ছেলে সুজনের দায়ের করা মামলায় এ দাবি করা হয়েছে।

আনছার আলীর মৃতদেহ গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে নেয়া হয়। বিকেলে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফনকাজ সম্পন্ন করেন শোকে কাতর ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। অপরদিকে আলোচিত জিন ভর করার নাটক করা রোজিনা খাতুনকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সুজনের দায়ের করা মামলায় গতকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। এদিকে অভিযুক্ত ষড়যন্ত্রকারী মুকুল আত্মগোপন করেছে।

মামলাসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর উত্তরপাড়ার হতদরিদ্র আনছার আলীকে (৪৮) সুস্থ করার প্রতিশ্রুতিতে গ্রামেরই ভণ্ড কবিরাজ রোজিনা চিকিৎসা দেন। বটিকা সেবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আনছার আলী। বিষয়টি জানানো হলে গতপরশু শনিবার দুপুরে রোজিনা খাতুন গ্রামেরই লস্কর আলীর ছেলে প্রবাস ফেরত মুকুলকে সাথে নিয়ে আনছার আলীর বাড়িতে যান। সুস্থ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে শাদা পাউডার জাতীয় কেমিকেল দিয়ে ভাতের সাথে খাওয়াতে বলেন। তা খাওয়ানোর কিছুক্ষণের মাথায় আনছার আলী মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। তাকে হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও রোজিনা-ই হাসপাতালে নিতে দেননি।

মামলার বাদী সুজন বলেছে, আমাদের পৈত্রিক ভিটে টুকু ছাড়া কিছুই নেই। পিতা আনছার আলী দিনমজুরি করতেন। প্রতিবেশী মুকুল বিদেশে ছিলো। অনেক টাকা আছে। আমাদের ভিটে অল্প টাকায় কেনার জন্যই সে আমার পিতাকে ওই ভণ্ড কবিরাজ রোজিনাকে দিয়ে অসুস্থ করাতে চেয়েছিলো। সে কারণেই রোজিনাকে টাকা দিয়ে মুকুল ও রোজিনা দুজনে মিলে বটিকা ও শাদা পাউডার জাতীয় কেমিকেল দিয়ে হত্যা করেছে। আমরা বিচার চাই। দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশায় মামলা করেছি।

অপরদিকে গ্রামের সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, রোজিনা খাতুন দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়িতে আস্তানা গড়ে তোলে। কুয়েতি জিন তার ওপর ভর করে বলে প্রচার করে এলাকার সরল সোজা মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো। বিদেশে যাওয়ার ভিসা দেয়ার কথা বলেও অনেকের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে টাকা। কুয়েতি জিন ভিসা দিতে পারেনি। এ কারণে প্রতারিতরা বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষোভের আগুনে জ্বলছিলো। এরই মাঝে আনছার আলীকে তার প্রতিবেশী মুকুলের ষড়যন্ত্রে রোজিনা ওষুধ প্রয়োগে হত্যা করায় ক্ষোভের আগুন বহুগুণে বেড়ে গেছে। মুকুলকেও এলাকার অনেকেই খুঁজছে। সে আত্মগোপন করেছে।

উল্লেখ্য, গতপরশু আনছার আলী মারা গেলে গ্রামের সাধারণ মানুষ রোজিনাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুকুলের কথায় আনছার আলীকে ওষুধ প্রয়োগ করে বলে স্বীকার করেন। পরে তাকে দামুড়হুদা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর রোজিনা খাতুন নিজেকে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করে।