আজ সম্মেলন : খালেদা জিয়ার সামনে দল জাগানোর চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার: তিন দশক আগে বিএনপির নেতৃত্বে আসা বেগম খালেদা জিয়া চেয়ারপারসনই থাকছেন। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে এসে দলকে নতুন করে জাগিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জ তার সামনে। নির্ধারিত সময়ের তিন বছর পর আজ শনিবার সারাদেশ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে আয়োজিত এই কাউন্সিলে মিলিত হচ্ছেন।

তিন পর্বের অনুষ্ঠানমালার গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ৩ হাজার কাউন্সিলরের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার যারা আমন্ত্রণ তথা কার্ড পেয়েছেন এদের অধিকাংশই গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। সূত্র বলেছে, কার্ড নিয়ে যারা আয়োজনে উপস্থিত থাকছেন তাদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার অন্যতমরা হলেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খাঁন বাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, আলমডাঙ্গা বিএনপির সভাপতি শহিদুল কাওনাইন টিলু, সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সদর বিএনপি সভাপতি অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মন্টু, পৌর সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক মলিক মজু, জীবননগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান খোকন, সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি লিয়াকত আলী শাহ, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু প্রমুখ।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর দুই দফায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে গিয়েও সাফল্য পায়নি খালেদার দল। দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এখন সংসদের বাইরে। এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরাজয়ের দায় সরকারকে দিলেও বিভিন্ন সময়ে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে আক্ষেপ শোনা গেছে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কথায়। সেই দশা কাটিয়ে দলকে আন্দোলনের জন্য চাঙ্গা করতে খালেদা জিয়া কাদের নিয়ে কমিটি করবেন, কাদের বাদ দেবেন- সেই প্রশ্ন গত কয়েক দিন ধরে ঘুরছে নেতাকর্মী আর গণমাধ্যমের আলোচনায়। আর কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না আসায় টানা চতুর্থবারের মতো খালেদা জিয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের পদে নির্বাচিত হয়ে গেছেন কাউন্সিলের আগেই। একইভাবে তার ছেলে তারেক রহমানও দ্বিতীয়বারের মতো দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মহাসচিবের কাজ চালিয়ে আসা বিএনপি এবার একজন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব বেছে নেবে কি-না, স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি কতোটা বদলাবে- সেসব সিদ্ধান্তও শেষ পর্যন্ত চেয়ারপারসনের কাছ থেকেই আসবে।

দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নতুন কমিটি এমন হতে হবে যাতে সারাদেশ থেকে আসা নেতা-কর্মীরা একটা নতুন ভাবনা নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে বিষয়টি যেমন দলীয় প্রধানকে দেখতে হচ্ছে, তেমনি পদ প্রত্যাশী নেতাদের বাছাই করে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন তাকেই করতে হচ্ছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য এই চ্যালেঞ্জ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, এক-এগারোর পর থেকে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর নির্যাতন চলছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-হুলিয়া। নিখোঁজ-গুম করে নেয়ার মতো ঘটনার হিসাব অনেক দীর্ঘ। তারপরও বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমিয়ে রাখা যায়নি। ফিনিক্স পাখির মতোই তারা আবার জেগে উঠেছে।

      ষষ্ঠ কাউন্সিলের প্রতিপাদ্য: মুক্ত করবই গণতন্ত্র। স্লোগান: দুর্নীতি-দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। ৩০০০ কাউন্সিলর; ৪৫,০০০ ডেলিগেইট; ১৬০০০ তিথির বসার ব্যবস্থা। বিএনপির গঠনতন্ত্রে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও গত কয়েকটি কাউন্সিলে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার হাতেই ন্যস্ত হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব। ফলে কাউন্সিলে কমিটি ঘোষণা না করে অনেক পরে সেই ঘোষণা আসে চেযারপারসনের দপ্তর থেকে। সম্প্রতি সময়ে ওই ধারার পরিবর্তনের প্রত্যাশা এসেছে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অনেকের কথায়। বয়স্ক নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নবীনদের নিয়ে কমিটি করার, নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব চেয়ারপারসনের হাতে তুলে না দিয়ে কাউন্সিলেই তার সমাধা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাফরুল্লাহ।

ষষ্ঠ কাউন্সিল ঘিরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে টানানো হয়েছে বিশাল ডিজিটাল পোস্টার। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতির সামনে তারেক রহমানে হাত তোলা আলোকচিত্র সম্বলিত ব্যানারে লেখা আছে-  ‘মুক্ত করবোই গণতন্ত্র’, ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’।

রমনার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাঙ্গণে শুক্রবারই টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা। শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়কের লাইটপোস্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে পোস্টার।

পটুয়াখালীর আমতলী থেকে কাউন্সিলে যোগ দিতে আসা শিহাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছয় বছর পর কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। আমরা বিরুদ্ধে ২৮টি মিথ্যা মামলা। আমি বিশ্বাস করি, এই কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে এমন একটা পরীক্ষিত নেতৃত্ব আসবে, যারা আমাদের গণতন্ত্রের আলোর সন্ধান দেবে।

আজ শনিবার সকাল ১০টায় রমনার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাঙ্গণে তিন পর্বের কাউন্সিলের শুরু। উদ্বোধন করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের আগে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কাউন্সিলে যোগ দেবেন তারেক রহমান। বিকেল ৩টায় শুরু কাউন্সিলের মূলপর্ব, চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ এবং স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির নির্বাচন হবে এই পর্বে সন্ধ্যায় তৃতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।