আজ শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সাটিফিকেট (এসএসসি), দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা

এসএসসি দাখিল সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৭ লাখ ৮৬ হাজার

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে ২০১৭ সালের মাধ্যমিক স্কুল সাটিফিকেট (এসএসসি), দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। তিন ধারায় (স্কুল-মাদরাসা-কারিগরি) এবার মোট পরীক্ষার্থী ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬১৩ জন। আটটি সাধারণ বোর্ড এবং দুটি বিশেষায়িত (মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা) বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। তিনটি বিষয় ছাড়া (বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় ছাড়া সব বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হবে। সৃজনশীল বিষয়গুলোর পরীক্ষা সাধারণ বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে নেয়া হবে। সনাতন পদ্ধতিতে নেয়া তিনটি বিষয়ের প্রশ্ন সব বোর্ডেই আলাদাভাবে করা হয়েছে। গণিত ও উচ্চতর গণিত বিষয়েও সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল/ রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা হবে এবং উভয় পরীক্ষার মধ্যে ১০ মিনিটের ব্যবধান থাকবে।

এবার পরীক্ষা কেন্দ্রে কেন্দ্রসচিব ছাড়া আর কেউ মোবাইলফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্রসচিব জরুরি প্রয়োজনে মোবাইলফোন ব্যবহার করলেও সেটি স্মার্টফোন (যেফোনে ছবি তোলা যায়) হতে পারবে না। এ নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের চেয়ে এক লাখ ৩৫ হাজার ৯০ জন শিক্ষার্থী বেশি অংশ নিচ্ছে। সাধারণ আট বোর্ডে পরীক্ষার্থী হচ্ছে ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৯০০ জন। এর মধ্যে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ২১ হাজার ২০৩ জন বেশি। ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী বেশি অংশ নিচ্ছে ঢাকা কুমিল্লা ও সিলেট বোর্ডে। সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে ঢাকা বোর্ডে চার লাখ ৪৯ হাজার ৮৬ জন। সিলেট ও বরিশাল বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৯৪ হাজার ১৫২ এবং ৯৪ হাজার ১৯৩। অন্য সব কয়টি বোর্ডেই পরীক্ষার্থী দেড় লক্ষাধিক।

আজ সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে। প্রথম দিন পরীক্ষা হবে আটটি সাধারণ বোর্ডে এবং কারিগরি বোর্ডে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্রের। মাদরাসা বোর্ডে হবে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২ মার্চ। ৪ মার্চ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু করে ১১ মার্চের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে মোট তিন হাজার ২৩৬ টি কেন্দ্রে। সারা দেশের মোট ২৮ হাজার ৩৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। দেশের বাইরে (মোট আটটি কেন্দ্রে) বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের একাধিক কেন্দ্রে ঢাকা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এ দিকে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ২০ মিনিট ও অটিস্টিক এবং ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রালপালসি আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য ৩০ মিনিট বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১২ হাজার ৫৩৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে এসএসসিতে ৯ হাজার ৮২৫ জন। দাখিলে ১ হাজার ২৬৯ এবং কারিগরি শাখায় ১ হাজার ৪৪৫ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় ৩ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এছাড়া মাদরাসায় ৩০৩ ও কারিগরি শাখায় পরীক্ষার্থী ৫৪৭। চুয়াডাঙ্গার কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গা একাডেমী (ভেন্যু), সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (ভেন্যু)। মাদরাসা কেন্দ্র হলো চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র আলিয়া মাদরাসা এবং কারিগরি কেন্দ্রগুলো হলো- চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (ভেন্যু)। আলমডাঙ্গা ২ হাজার ৮১৮ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জ একাডেমী, মুন্সিগঞ্জ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (ভেন্যু), হাটবোয়ালিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (ভেন্যু)। মাদরাসা কেন্দ্র হলো- আলমডাঙ্গা আলিম মাদরাসা এবং কারিগরি কেন্দ্রগুলো হলো- আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩টি মূলকেন্দ্রসহ অতিরিক্ত ৩টি ভ্যেনুতে মোট ২ হাজার ৫২৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্রে ৩৫৯ জন, দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে (ভোকেশনালসহ) ৮২৫ জন, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭০০ জন এবং কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৩৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া ২টি কেন্দ্রে মোট ৫১৩ জন দাখিল পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এরমধ্যে দামুড়হুদা ডিএস দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে ২৭৪ জন এবং কার্পাসডাঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ১৮৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার স্বার্থে পরীক্ষা কেন্দ্র সমূহের ২০০ গজ সীমানার মধ্যে সকল প্রকার যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছেন, জীবননগরে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপজেলার ৬টি কেন্দ্রে এসএসসি ও ভোকেশনাল  এবং ১টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২ হাজার ৮৪ জন পরীক্ষার্থী বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে ২শ গজের মধ্যে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে করা হয়েছে মাইকিং।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জীক্ষননগর উপজেলার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৬টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এসএসসি পরীক্ষায় ১ হাজার ৪৭৫ জন, এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৩৭১ জন ও দাখিল পরীক্ষায় ২৩৮ জন পরীক্ষার্থীর অংশ গ্রহণ করবে। জীবননগর মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৫৯জন, আন্দুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩১৪ জন, হাসাদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৬৩ জন. মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২১৯ জন এবং উথলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২২০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় জীবননগর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২১১ জন ও জীবননগর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৬০ জন পরীক্ষার্থী এবং দাখিল পরীক্ষায় জীবননগর উপজেলা আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে ২৩৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে এসএসসি পরীক্ষায় ৬ হাজার ১৩০ জন, এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ৯২৮ জন ও দাখিল পরীক্ষায় ৬৩৪ জন অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার সর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

এ বছর জেলার ৩ উপজেলার মোট ৯টি কেন্দ্রে ৬ হাজার ১৩০ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলার মোট ৩টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৫৫ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯৮০ জন, মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ৭২৩ জন ও আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭৫২ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। গাংনী উপজেলার মোট ৫টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৭০ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৫৫২ জন, গাংনী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৯২ জন, বামুন্দী-নিশিপুর কেন্দ্রে ৮৭৬ জন, জুগিরঘোপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৮০ জন ও সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৭০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এছাড়া মুজিবনগর উপজেলার একমাত্র কেন্দ্র মুজিবনগর মাধ্যমিক বিদ্যলয়ে এক হাজার ১০৫ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে।

এদিকে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় জেলার মোট ৯২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মেহেরপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ৩৬৯ জন, গাংনী পাইলট স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ৪১৯ জন ও মুজিবনগরের দারিয়াপুর কেন্দ্রে ১৪০ জন রয়েছেন।

এছাড়া দাখিল পরীক্ষায় মেহেরপুর দারুল উলুম আহমদিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৩৭২ জন ও গাংনীর সিদ্দিকীয়া মাদরাসা কেন্দ্রে ২৬২ জন অংশ নিচ্ছে।