আজ থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

মাথাভাঙ্গা মনিটর: সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ১৬৪টি দেশের প্রায় ২০ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবার হজ করছেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এক লাখের বেশি। হজ করতে মক্কায় আসা মুসলমানরা শুক্রবার মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) জুমার নামাজ পড়েন। পরে মক্কা থেকে তারা জড়ো হতে শুরু করেন ১০ কিলোমিটার দূরে তাবুনগরী মিনায়। শাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত বিভিন্ন বর্ণ, ভাষা, জাতীয়তার লাখো মুসলমান কেউ বাসে, কেউ গাড়িতে, কেউবা হেঁটে মিনার পথে রওনা হন। তাদের সবার মুখে ছিলো ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক’ ধ্বনি। এর অর্থ হলো, ‘আমি হাজির। হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ শনিবার দুপুরের মধ্যে হজে আসা সবাই মিনায় অবস্থান নেন। ইবাদত-বন্দেগিতে মিনায় রাত কাটানোর পর আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করেন, নামাজ পড়েন জামায়াতের সঙ্গে।

আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবহাওয়া আরামদায়ক না হলেও হজ করতে আসা মুসলমানরা তা আমলে নিচ্ছেন না। ভারত থেকে হজে যাওয়া তালাত আহমাদ বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা অসাধারণ। আমি রোমাঞ্চিত।’ এর আগে দুইবার ওমরাহ করলেও এই প্রথম হজ করছেন বলে জানান তালাত। মরক্কো থেকে আসা ৫৪ বছর বয়সী নাসের বেনফিত্তাহ এবারের হজ ব‌্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সব দেশ থেকে সব ভাষার মানুষ আজ এখানে এসেছে এক ছাতার নিচে।’ মিনায় আসার পর সবাই রাত কাটিয়েছেন তাঁবু খাটিয়ে। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য রোববার ভোরে তারা যাত্রা শুরু করেন বিদায় হজের স্মৃতি জড়িত আরাফাত ময়দানের উদ্দেশে। সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা সেখানে থাকবেন। চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন, হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন।

সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়, ১৯৮১ সাল থেকে আরাফাতের মসজিদে নামিরাহে হজের খুতবা দিয়ে আসছিলেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ। তবে এবার তিনি অসুস্থ থাকায় তার বদলে খুতবা দেবেন সৌদি আরবের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের চেয়ারম‌্যান সালেহ বিন হুমাইদ। এ খুতবা রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে বিশ্বময়। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। ১৪শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ। এই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হবে স্বল্প সময়ের জন্য।

ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ। আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে সন্ধ্যায় মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন সমবেত মুসলমানরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হবে। সোমবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা। গতবছর হজ মওসুমে দুটি বড় দুর্ঘটনার পর সৌদি আরবের হজ ব্যবস্থাপনার সমালোচনায় মুখর হয় ইরান। রিয়াদের বদলে হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মুসলিম বিশ্বের হাতে রাখারও দাবি তোলে তারা। হজ মওসুমের শুরুতেই গতবছর ১১ সেপ্টেম্বর মক্কায় মসজিদুল হারামের সংস্কার কাজের জন‌্য রাখা একটি ক্রেন উল্টে ১১১ জনের মৃত‌্যু হয়, যাদের মধ‌্যে ২৫ জন ছিলেন বাংলাদেশি। এরপর হজের শেষ মুহূর্তে ২৪ সেপ্টেম্বর মিনায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর ছুড়তে যাওয়ার সময় ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে সহস্রাধিক মানুষের মৃত‌্যু হয়। বিভিন্ন দেশ তাদের নিহত নাগরিকদের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে নিহতের মোট সংখ‌্যা ২ হাজার ২৩৬ জনের বেশি। তবে ঘটনার পর দুই দিনে ৭৬৯ জনের লাশ উদ্ধারের খবর দেয়ার পর সৌদি আরব সরকার আর সেই তালিকা হালনাগাদ করেনি।