আজ থেকে সরকার অবৈধ : খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আজ ২৫ অক্টোবর থেকে বর্তমান সরকার অবৈধ। এ অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা এখন নাগরিক দায়িত্ব এবং আমরা তা করবো। কারণ মানুষ এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। দুর্নীতিবাজ, দলবাজ ও অত্যাচারী এ সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে শিক্ষকসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপিপন্থি শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে আপনারা টালবাহানা করছেন। এতোদিন আপনারা আমাদের বলেছেন-ফর্মুলা দিন, আমাদের বলছেন-সংসদে প্রস্তাব দিতে। আপনাদের কথামতো আমরা সবকিছু করলাম, কোনো কিছু বাদ নেই। কাজেই বল এখন আপনাদের কোর্টে। এখন আপনাদেরই অ্যাক্ট করতে হবে। সংবিধান সম্মতভাবেই আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা বলেছি প্রয়োজনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচিত করে আনুন, যারা ওই সরকারে থাকবেন তারা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। দেশে শিক্ষিত, যোগ্য ও নিরপেক্ষ বহু লোক রয়েছেন। তাদের অধীনে একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, দেশের মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। কেন আপনারা তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করলেন? এটার তো কোনো দরকার ছিলো না। এ তত্ত্বাবধায়কের দাবিও তো আপনাদেরই ছিলো। এরজন্য আপনারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছেন। বহু জ্বালাও-পোড়াও করেছেন, গান পাউডার দিয়ে বাসযাত্রীদের পুড়িয়ে মেরেছেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ পিটিয়ে মেরেছেন। আপনাদের দাবি মেনেই আমরা তত্ত্বাবধায়ক দিয়েছিলাম। খালেদা জিয়া বলেন, সেই তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করে আপনারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করেছেন। এর আগেও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য আপনারা বাকশাল করেছিলেন। কিন্তু থাকতে পারেননি। এখন যে বলছেন-সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বেন না, এই সংবিধান অনুযায়ীই আপনারা নির্বাচন করবেন। এ চিন্তা ছেড়ে দিন, একতরফা নির্বাচনের কথা ভুলে যান। আপনাদের অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতেও দেয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যদি নিজেই ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে জিতেন, তাহলে সেটির মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। আপনি ক্ষমতায় থাকলে দেশে কী নির্বাচন হবে! এখন সবখানে ১৪৪ ধারা দেয়া হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, তারা নির্বাচনকে কত ভয় পায়।

আজ শুক্রবার ঢাকায় ১৮ দলের সমাবেশে সরকার নানাভাবে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাস্তা-ঘাট থেকে নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অনেককে গুম করা হচ্ছে, অনেককে রিমান্ডে ও অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। প্রতি পদে পদে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। সরকারকে বলবো-কোনো ধানাই-পানাই করবেন না, সমাবেশে বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটলে এর দায়-দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।

আজকের সমাবেশে শিক্ষক-কর্মচারীসহ সবাইকে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে আমরা সরকারে গেলে আপনাদের সব দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্ন। আজ (বৃহস্পতিবার) এ সরকারের শেষ দিন। নৈতিকতা থাকলে তাদের উচিত ছিলো আজ পদত্যাগ করা। কিন্তু করেনি। কারণ তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বলেন, এ সরকার শিক্ষকদের জন্য কিছুই করেনি। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীকে দিয়ে শিক্ষকদের কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি নেতা বরকত উল্যাহ বুলু, আমান উল্যাহ আমান, এহছানুল হক মিলন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদিন সবুজ ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ। গতকালের এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে জাতীয় প্রেসক্লাবের চারপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।