আজহারের মামলার রায় ঘোষণা যেকোনো দিন

স্টাফ রিপোর্টার: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করা হবে। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রাখেন। হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ রয়েছে আজহারের বিরুদ্ধে। আজহারের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও নির্যাতনের শিকার একজনের জন্য ক্ষতিপূরণ কামনা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি দাবি করে অভিযোগ থেকে আজহারকে অব্যাহতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আসামিপক্ষ।

এ নিয়ে দু ট্রাইব্যুনালে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রইলো। এর মধ্যে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায়ও রয়েছে। এছাড়া আপিল বিভাগে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের করা আপিলের রায়টি অপেক্ষমাণ রয়েছে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুই ট্রাইব্যুনাল থেকে নয়টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর গতকাল পাল্টা আইনি যুক্তি উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম গতকাল সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কামনা করেছিলেন। একই সাথে একাত্তরে আজহারের নির্যাতনের শিকার এক নারীর জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ারও দাবি জানান তিনি। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে বলেন, জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। অভিযোগ থেকে আজহার অব্যাহতি পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের ছয় ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে গত বছরের ১২ নভেম্বর আজহারের বিচার শুরু হয়। এর আগে ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল এটিএম আজহারের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়। ওই বছর ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত শেষে গত বছর ১৮ জুলাই আজহারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর নভেম্বরে অভিযোগ গঠন করে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এম ইদ্রিস আলীসহ প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১৯ জন সাক্ষ্য দেন। তবে সপ্তম সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে বৈরী ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আজহারের যুদ্ধাপরাধের একজন ভিকটিম ১৪ নম্বর সাক্ষী হিসাবে ক্যামেরা ট্রায়ালে জবানবন্দি দেন। চলতি বছর ৩ ও ৪ আগস্ট আজহারের পক্ষে একমাত্র সাফাই সাক্ষী হিসাবে জবানবন্দি দেন আনোয়ারুল হক। এরপর দু পক্ষ দীর্ঘসময়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে ট্রাইব্যুনালে।

আজহারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে আজহার রংপুরের কারমাইকেল কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি। জেলার আলবদর বাহিনীরও নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত ৯ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, গুরুতর জখম ও অগ্নিসংযোগ। এছাড়া আজহার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও তা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে অপরাধ সংঘটন করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ১৫টি মামলার বিচার শেষ করেছেন। এর মধ্যে রায় ঘোষণা হয়েছে নয়টির। এতে দণ্ডিত হয়েছেন ১০ জন যুদ্ধাপরাধী। এর মধ্যে সাতজন আপিল করেছেন। দুটি আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এতে একজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। অন্যজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাভোগের আদেশ দেয়া হয়েছে। আর আপিলে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় একজন অভিযুক্ত মারা যাওয়ায় একটি আপিল অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালে ছয়টি মামলার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে। যেকোনো দিন এসব মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে দু ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলা বিচারাধীন। আর মামলা করার লক্ষ্যে তদন্ত চলছে আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে। বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে একটি মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।