আগে-পিছে পুলিশ-বিজিবি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে ৯টি নৈশকোচের ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত : দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: টানা ৫ দিনের অবরোধের মাথায় গতকাল শনিবার থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে পুলিশ-বিজিবি প্রহরায় দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল শুরু করেছে। গতরাতে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে কমপক্ষে ৯টি নৈশকোচ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। অপরদিকে অবরোধের নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জীবননগরের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চুয়াডাঙ্গায় অবরোধকারীদের তেমন পিকেটিং লক্ষ্য করা না গেলেও গতকাল মেহেরপুরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

গত ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোট দেশজুড়ে সড়ক, নৌপথ ও রেলপথ টানা অবরোধের ঘোষণা দেয়। এ কর্মসূচি ঘোষণার পর চুয়াডাঙ্গার আভ্যন্তরীণ রুটে বা দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছু ট্রাক রাতে ও দিনে চলাচল করতে দেখা যায়। যাত্রী সাধারণকে যেমন দুর্ভোগের শিকার হতে হয় তেমনই পণ্যবহন নিয়ে বিশেষ করে এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েকটি নৈশকোচ ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে। পথিমধ্যে জীবননগরের উথলী মোড়ের অদূরে কয়েকটি যানবাহনে হামলার শিকার হয়। গতরাত ১০টা ১০ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস টার্মিনাল থেকে ৯টি নৈশকোচ ও দুটি ট্রাক ছেড়ে যায়। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, পূর্বাশা পরিবহন, এসএম পরিবহন ও রয়েল এক্সপ্রেসের মোট ৯টি কোচ ছেড়ে যায়। এছাড়া দুটি সবজিবাহী ট্রাকও ছাড়ে এ সময়।

সূত্র জানায়, এসব যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য আগে ও পিছে রয়েছে বিজিবি ও পুলিশের বিশেষ টিম। সাথে আছে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে রয়েছেন মুনিবুর রহমান। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসী জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলা সীমানা বদরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত নিরাপত্তা দিয়ে ঝিনাইদহ জেলা সীমানায় যানবাহনগুলো পৌঁছে দেয়া হবে। গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাসটার্মিনালে উপস্থিত হন সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসী ও ওসি তদন্ত এএইচএম কামরুজ্জামান খান। জেলা প্রশাসনের বিশেষসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিরাপত্তা দিয়ে দূরপাল্লার কোচই ছাড়া হচ্ছে না। আন্তঃজেলা বাস চলাচলেরও বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, অবরোধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে আলিপুর গ্রামের অভিযান চালিয়ে একটি মাজারের পাশ থেকে পুলিশ এদেরকে আটক করে। আটককৃতরা হচ্ছে- শহরের গাংপাড়ার আলতাফ হোসেনের ছেলে আতিয়ার রহমান আতি (২৫), বসুতিপাড়ার আব্দুল লতিফ ব্যাপারীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩২) ও আঁশতলাপাড়ার মৃত মকছেদ আলীর ছেলে মুকুল (২৫)। গ্রেফতাকৃতরা সকলেই বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে। আটকৃতদের গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তায় মেহেরপুরের আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার মেহেরপুর পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আজ রোববার থেকে দূরপাল্লার পরিবহন ও জেলার আভ্যন্তরীণ রুটে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চালুর আশ্বাস দেন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলমের সভাপতিত্বে দুপুরে মতবিনিময়সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. মারুফ আহমেদ বিজন, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলী, পৌর মেয়র আলহাজ মোতাছিম বিল্লাহ মতু, বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুলসহ ব্যবসায়ী সমিতি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। সভার শুরুতে মেহেরপুর পুলিশ সুপার বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের চলাফেরায় যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে লক্ষ্যে নাগরিক দায়িত্ব থেকে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

মেহেরপুর অফিস আরো জানিয়েছে, অবরোধের ৫ম দিনে মেহেরপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মাহবুর রহমান, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন মোল্লা, জেলা ছাত্রদল নেতা আহমেদ রাজিব খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক তোফায়েল আহমদ প্রমুখ।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলার সীমানা থেকে নৈশকোচ ও ট্রাক গ্রহণ করে নিরাপত্তা দিয়ে টার্মিনালে নেয়ার পর আরো কোচ একত্রিত করে মাগুরা জেলা সীমানায় পৌঁছে দেয় ঝিনাইদহ পুলিশ। মাগুরা থেকে ফরিদপুরে ও পরে রাজবাড়ি জেলায় পর্যায়ক্রমে পৌঁছে দেয়ার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট পারে একইভাবে নিরাপত্তা দেয়া হয় তাদেরকে।