আগামী সপ্তায় ফের হরতাল আসছে : ১৮ দলের সাথে বৈঠকের পর ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার: গত দু সপ্তায় দু দফায় টানা ৬০ ঘণ্টা করে হরতাল দেয়ার পর আবারও একই কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আগামী সপ্তাই এ হরতালের কর্মসূচি আসছে। সোম থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে যেকোনো তিনদিন ফের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল হবে। আবার এর সময়সীমা বাড়তে বা কমতেও পারে। তবে এটা চূড়ান্ত করার বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আবারও হরতাল কর্মসূচি দেয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ শুক্রবার ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিবদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকের পর নতুন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

জানা গেছে, গতকালের বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনাকালে দলীয় নেতাদের খালেদা জিয়া বলেছেন, এর আগে ৬০ ঘণ্টা হরতালের বিষয়টি আমরা ঘোষণা করার আগেই মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়ে যায়। এনিয়ে পরে ১৮ দলের নেতারা আমার কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এরপর বিএনপি নেতারা দলীয় চেয়ারপারসনকে বলেছেন, ঠিক আছে, এবার যে তিন বা এর কমবেশি সময় হরতাল হবে সেটি কোনদিন থেকে কোনদিন, কিংবা কোন সময় থেকে শুরু হয়ে কোন সময়ে শেষ হবে তা নির্ধারণের ভার আমরা আপনার ওপর ছেড়ে দিলাম।

উল্লেখ্য, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবিতে গত ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল দেয় ১৮ দল। অভিন্ন দাবিতে গত ৪ থেকে ৬ নভেম্বর ফের টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। রাত পৌনে ৯টায় শুরু হয়ে প্রায় ১১টায় শেষ হওয়া বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বৈঠকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, আগে ৬০ ঘণ্টা করে ১২০ ঘণ্টা হরতাল দেয়া হয়েছে, এবারও একই কর্মসূচি না দিয়ে অবরোধ দেয়া উচিত। কারও মত ছিলো, আগে যেহেতু ৩ দিন করে হরতাল করা হয়েছে, তাই এবার আন্দোলনকে আরও চাঙ্গা করতে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা চারদিন হরতালের কর্মসূচি দেয়া উচিত। আবার কোনো কোনো সদস্য বলেছেন, পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবার দুদিন হরতাল দিলে জনগণ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করবে। দীর্ঘ আলোচনা শেষে সবাই সম্মত হন যে, এখনই অবরোধ নয়, আপাতত হরতালের কর্মসূচি দেয়াই ঠিক হবে। তবে দু, তিন নাকি চারদিন হরতালের কর্মসূচি দেয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন দলীয় ও জোট প্রধান।

স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য জানান, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত অবরোধ বা অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে না যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যদি একতরফা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে তাহলে পরদিন থেকেই অবরোধসহ দ্রুত অসহযোগ আন্দোলনে যাবে ১৮ দল।

বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, হরতাল কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের গা-ছাড়া ভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। অনেকের নাম ধরে ধরে তিনি বলেছেন, আগামীতে যেসব কর্মসূচি দেয়া হবে সেখানে যেন তাদেরকে সক্রিয় দেখতে পাই। অবশ্য ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি সফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের আন্তরিকতার প্রশংসা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য বিরোধী দলের পক্ষ থেকে পথ উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপির বৈঠকে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে সরকারি দলের সাথে যোগাযোগের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে তার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, বেগম সারোয়ারী রহমান, এমকে আনোয়ার, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।