আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে নতুন বেতনস্কেলের অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিদ্যমান টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়েই নতুন বেতন কাঠামোর অনুমোদন আগামী সপ্তায় মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে। সরকার গঠিত বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩ সুপারিশে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিলো। বেতন কমিশন রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সচিব কমিটিও এ দুটিকে বাদ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। ফলে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেতন কমিশনের রিপোর্টটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অনুমোদিত হলে সরকারি চাকরিজীবীরা ১ জুলাই থেকে নতুন স্কেল অনুযায়ী বেতন গ্রহণ করবেন। তবে বর্ধিত ভাতা দেয়া হবে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশন তাদের প্রতিবেদনে আগামীতে সরকারি চাকুরেদের জন্য টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেয়ার সুপারিশ করে সরকারের কাছে। সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রচলিত সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বা উচ্চতর স্কেল ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা যেতে পারে। এর পরিবর্তে সুপারিশকৃত বেতন গ্রেড বা স্কেলের মধ্যে টাকার অঙ্কে দূরত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের হার বৃদ্ধি করে সুপারিশকৃত ৫-১৬ গ্রেড বা স্কেলে শতকরা ৫ ভাগ এবং ২-৪ গ্রেড বা স্কেলে বার্ষিক ৪ ভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট চক্রবৃদ্ধি হারে প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে এবং ৯ম থেকে ১৬তম গ্রেড বা স্কেলে ২০টি সোপান (স্টেপ) রাখা হয়েছে, যাতে কারো বেতন বৃদ্ধি থেমে না যায়। সুপারিশকৃত ব্যবস্থাধীনে ১৫ বছর চাকরির পর একজন সরকারি চাকুরের বেতন দ্বিগুণ হবে।

এদিকে বেতন কমিশন সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ মূল বেতন ৮০ হাজার টাকা করার কথা বললেও সচিবদের নেতৃত্বে পর্যালোচনা কমিটি তা কমিয়ে ৭৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে। কমিশনের সাথে পার্থক্য থাকছে সর্বনিম্ন বেতনেও। পে-কমিশন সর্বনিম্ন ৮২০০ টাকা মূল বেতনের সুপারিশ করেছিলো। পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশে তা বাড়িয়ে ৮২৫০ টাকা করার কথা বলেছে। বেতনের ধাপ নিয়েও কমিশনের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে কমিটি। কমিশন বেতনের ধাপ কমিয়ে ১৬টি করার কথা বলেছিলো। পর্যালোচনা কমিটি এ ধাপ ২০-এ রাখার পক্ষপাতি। তবে কমিশনের সাথে মতপার্থক্য থাকলেও কমিটি যে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন ৮৭ থেকে ১০১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।

উল্লেখ্য, পেকমিশন তাদের সুপারিশে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদ্যমান ২০ গ্রেডের পরিবর্তে ১৬ গ্রেড করার প্রস্তাব দিয়েছিলো। এর মধ্যে প্রথম গ্রেডে বিদ্যমান বেতন ৪০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) করার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রেডে ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা। তৃতীয় গ্রেডে ২৯ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা। ৪ গ্রেডে ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ৫২ হাজার টাকা। ৫ গ্রেডে ২২ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ৬ গ্রেডে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩৭ হাজার টাকা। ৭ গ্রেডে ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা। ৮ গ্রেডে ( বিদ্যমান ৮ ও ৯ গ্রেড এক করে) ১২ হাজার ও ১১ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। ৯ গ্রেডে ৮ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। ১০ গ্রেডে ৬ হাজার ৪০০ থেকে ১৩ হাজার টাকা। ১১ গ্রেডে (বিদ্যমান ১২ ও ১৩ গ্রেড এক করে) ৫ হাজার ৯০০ ও ৫ হাজার ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১১ হাজার ৫০০ টাকা। ১২ গ্রেডে ৫ হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। ১৩ গ্রেডে ৪ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা। ১৪ গ্রেডে ৪ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৯ হাজার ৫০০ টাকা। ১৫ গ্রেডে (বিদ্যমান ১৭ ও ১৮ গ্রেড এক করে) ৪ হাজার ৫০০ ও ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৯ হাজার টাকা এবং ১৬ গ্রেডে (বিদ্যমন ১৯ ও ২০ গ্রেড এক করে) ৪ হাজার ২৫০ ও ৪ হাজার ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ২০০ টাকা করার সুপারিশ করে।

কমিশনের সুপারিশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্যসচিবের বেতন মাসিক এক লাখ টাকা, সিনিয়র সচিবদের মাসিক বেতন নির্ধারিত ৮৮ হাজার টাকা এবং সচিবদের মাসিক বেতন নির্ধারিত ৮৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ অনুযায়ী সচিবদের বেতন হবে গ্রেড ১ এর চেয়ে ৪ হাজার টাকা বেশি।