আগামীতে শুধু অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা

 

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে আর কোনো সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা হবে না। একবারে অষ্টম শ্রেণিতে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। অষ্টম শ্রেণির এ পরীক্ষা হবে টার্মিনাল পরীক্ষা। এর দুটি সম্ভাব্য নাম প্রস্তাব করা হয়েছে- পিইসি ও পিএসসি। যে কোনো একটি গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করায় সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ। সভা শেষে তিনি জানান, বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিতে পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) এবং অষ্টম  শ্রেণিতে জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) নামে দুটি পৃথক পরীক্ষা নেয়া হয়। আমরা দুটির পরিবর্তে একটি পরীক্ষা চালুর সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুযায়ী এখন অষ্টম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) বা প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষা হবে। দুটি নামের মধ্যে যে কোনো একটি সরকারের নীতি-নির্ধারণি পর্যায়ের অনুমোদন সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হবে।

১৮ মে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর এটি ছিল প্রথম বৈঠক। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, ব্যানবেইস (বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো) এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সব সদস্য অষ্টম  শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরকে টার্মিনাল ধরে একটি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীকে একটি সনদ দেয়ার পক্ষে মত দেন। সেই হিসেবে আগামী বছর একটি পরীক্ষা হলে এর নাম পিএসসি দেয়ার সুপারিশ করেন তারা। বৈঠকে চারটি বিষয় মোটা দাগে আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- অষ্টম  শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর উন্নীতকরণে ‘স্টক টেকিং (কী আছে কী নেই সেই হিসাব) করা। করণিয় চিহ্নিত করা। কোন কাজটা প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের, কোনটা মাধ্যমিকের আর কোনটা উভয় মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সম্পন্ন করবে সেই তালিকা করা। এরপর অ্যাকশন প্ল্যান (কর্মকৌশল) থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা। এছাড়া ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কারিকুলাম পঞ্চম শ্রেণির ধারায় নেয়া, বিদ্যমান আইন সংশোধন, স্কুল ম্যাপিং, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাসহ বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথমেই স্কুলের ম্যাপিংয়ে কোনটা কি ধরনের স্কুল সেই চিত্র যৌথভাবে বের করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও ব্যানবেইস। এ ক্ষেত্রে একটা গ্রাম বা ইউনিয়নে ক’টা প্রাইমারি স্কুল আর কটা নিম্ন মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম), ক’টা হাইস্কুল (ষষ্ঠ থেকে দশম) এবং ক’টা স্কুল ও কলেজ (প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) আছে, সেটি নির্ধারণ করা হবে। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীর তুলনায় আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম  শ্রেণি পর্যন্ত খুলতে হবে কিনা, সেই প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা হবে।

বৈঠকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শিক্ষক ও তাদের বেতন-ভাতা এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকরা এখন যে যেই মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন, তিনি সেই মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকবেন। সরকারি স্কুলে পঞ্চম  শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকদের এখন বেতন দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়ে যাবে। তবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যেসব বেসরকারি স্কুল নতুন খোলার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে তার অনুমতি দেয়া হবে না। যারা সাময়িক অনুমতি পেয়ে চালাচ্ছে, তারা স্বীকৃতি পাবে না। আর স্বীকৃতিপ্রাপ্তরা এমপিও পাবে না। তবে প্রয়োজনে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলে (নিম্ন মাধ্যমিক) শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএ (শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ) নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সনদ লাগবে। আর সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তও এনটিআরসিএর নির্ধারিত যোগ্যতার অনুরূপ করা হবে। এজন্য শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করা হবে। এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা সচিব বলেন, মূল কথা হচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠান যেখানে যেভাবে আছে, সেভাবেই চলবে। এমনকি বেসরকারি স্কুলের পরিচালনার ক্ষেত্রে এসএমসির ধারণাও বহাল থাকবে। প্রাথমিক মন্ত্রণালয় শুধু সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, বর্তমানে ৭৬০টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছে। নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু বিদ্যমান পাঠ্যবই পড়াতে হবে, তাই আমরা এসব স্কুলের শিক্ষকদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশিক্ষণে পাঠাব। এজন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ব্যয় আমরা বহন করবো।

বৈঠকে তৃতীয় অগ্রাধিকার আলোচনায় আসে কারিকুলাম। এতে বলা হয়, বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কারিকুলাম যোগ্যতাভিত্তিক। অর্থাৎ, একজন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করলে ক’টা যোগ্যতা অর্জন করবে তা নির্ধারিত আছে। কিন্তু ষষ্ঠ  শ্রেণি থেকে কারিকুলাম সৃজনশীল পদ্ধতির। এ কারণে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কারিকুলাম এখন যোগ্যতাভিত্তিক করা হবে। এ কাজ দেয়া হয় এনসিটিবিকে। প্রাথমিক শিক্ষা সচিব বলেন, আগামী বছর শুধু ষষ্ঠ শ্রেণির কারিকুলাম যোগ্যতাভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে সপ্তম এবং ২০১৯ সালে অষ্টম  শ্রেণির কারিকুলাম ও বই হবে যোগ্যতাভিত্তিক।

এ ব্যাপারে বৈঠকে যোগ দেয়া এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক) অধ্যাপক সরকার আবদুল মান্নান বলেন, কারিকুলাম দ্রুততার সঙ্গে তৈরি এবং ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য একটি অ্যাকশন প্ল্যান করা হবে। আসলে আমি মনে করি, পঞ্চম শ্রেণির পর নতুন কারিকুলাম জোড়া লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ, শুধু ষষ্ঠ থেকে অষ্টমের কারিকুলাম যোগ্যতাভিত্তিক করে সুফল পাওয়া যাবে না। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটা ধারা বা গোটা প্রাথমিক স্তরই একটি সার্কেল ধরে প্রণয়ন করতে হবে।