আইন প্রয়োগের বিষয়টি দেখতে হবে পেশাদারত্বের দৃষ্টিতে

 

ক্ষমতার দাপটে অন্ধ না হলে কি অন্যের বরাদ্দকৃত কেবিন কেড়ে নেয়ার জন্য পেশিশক্তি প্রয়োগ করা যায়? একজন রোগী ভর্তি রয়েছে। সেখানে অন্য রোগীকে জোর করে রাখতে হবে কোন যুক্তিতে? ক্ষমতার দাপটে খোঁড়া যুক্তিও যে সেখানে সবল, তা দীর্ঘ সময় ধরে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনাই প্রমাণ।

চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালটি ৫১ শয্যা থেকে ১শ শয্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে শয্যা সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে। সে লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও চলছে। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুলতার কারণেই শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি লোকবল নিয়োগের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। বহির্বিভাগেও রোগীর উপচে পড়া চাপ লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘদিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। ফলে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারদেরই পালাক্রমে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ কারণে বহির্বিভাগে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ফুটে ওঠে। অন্তবিভাগে রোগী ও রোগীর লোকজনের চাপেও চিকিৎসা সেবাদানের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এরপর পেশিশক্তি প্রয়োগের হুঙ্কার তো লেগেই থাকে। অন্য রোগীর বরাদ্দ নেয়া কেবিনে বিশৃঙ্খলা অনেকটা নতুন সংযোজন। যা লজ্জার।

অবশ্যই সরকারি হাসপাতাল সকলের। চিকিৎসাসেবা পাওয়া দেশের প্রত্যেকের যেমন সাংবিধানিক অধিকার, তেমনই হাসপাতালের নিয়ম-কানুন মানতেও সকলে বাধ্য। একজন রোগী নিশ্চয় নিয়ম মেনেই কেবিন বরাদ্দ নিয়েছেন। কেবিন বরাদ্দ নিতে হলে নির্ধারিত হারে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। রোগীর ছাড়পত্র না দেয়া পর্যন্ত সেই রোগী যদি কেবিন না ছাড়তে চান তা হলে অন্য কেউ কি সেখানে ক্ষমতার দাপট দেখানোর অধিকার রাখে? গতপরশু রাতে দীর্ঘ সময় ধরে কেবিন দখলে নেয়ার জন্য যা করা হয়েছে তা আইন সমর্থন করে না। এরপরও পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর মারামারির মাঝে প্রথমদিকে তাদের দর্শকের ভূমিকায় থাকতে হয়েছে। পরে অবশ্য পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপরও মামলা হয়নি। কেন হয়নি? আইন সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ হয় না বলেই ক্ষমতার দাপটে পেশিশক্তি প্রদর্শনের হীন প্রবণতা বাড়ছে।

আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। কে কোন দল করে, কার পাশে কোন নেতা তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের দেখার বিষয় নয়। আইন প্রয়োগের বিষয়টি দেখতে হবে পেশাদারত্বের দৃষ্টিতে। আইন ভঙ্গ করলে সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলেই পাল্টাবে হীনমানসিকতা।