অ্যাপেন্ডিসাইট অপারেশনের পর আয়ার ইনজেকশন : শিশুর মৃত্যুতে ভালাইপুরেক্ষোভের আগুন

চুয়াডাঙ্গার যেখানে সেখানে গজে ওঠা ক্লিনিক নার্সিং হোমে একের পর একঅপচিকিৎসার অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার যেখানে সেখানে গজে ওঠা ক্লিনিক, নার্সিং হোমে অপচিকিৎসায় অকালে ঝরছে একের পর এক তরতাজা প্রাণ। গতকালও ৯ বছরের ফুটফুটে এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। ভালাইপুর মোড়ের ক্লিনিকে সকালে অ্যাপেন্ডিসাইট অপারেশনের পর জ্ঞান ফিরতেই ঝাড়ুদার আয়ার ইনজেকশন পুসে ঝরে যায় শিশু মহুয়ার প্রাণ।

মহুয়া আলমডাঙ্গা খাদিমপুরের আলীমুল ইসলামের মেয়ে। মহুয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ভালাইপুর মোড় সড়ক অবরোধ করে। সাইনবোর্ডবিহীন ক্লিনিকে হামলা চালিয়ে আংশিক ভাঙচুরও করে। ঘণ্টাখানেকের অবরোধের মাথায় সকাল ৯টার দিকে গোকুলখালী ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়ক যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়। স্থানীয়রা ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের আলমডাঙ্গা ভালাইপুর মোড়ে জনতা ক্লিনিক নামে পরিচিতি ক্লিনিকে মহুয়াকে গত শুক্রবার বিকেলে ভর্তি করানো হয়। তার পেটে যন্ত্রণার কারণে ভর্তি করানো হলে অ্যাপেন্ডিসাইট অপারেশনের জন্য জানান চিকিৎসক। গতকাল শনিবার ভোর ৬টার দিকে ডা. আবু হাসানুজ্জামান নুপুর অপারেশন করেন বলে জানান মহুয়ার আত্মীয়স্বজন। অপারেশনের দেড় দু ঘণ্টার মাথায় জ্ঞান ফেরে। ক্লিনিকের ঝাড়ুদার আয়া লিপি ইনজেকশন দেন। এরপরই মহুয়া মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ে। মহুয়ার পিতা-মাতাসহ নিকটজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিষয়টি জানার পর স্থানীয়রা ক্ষোভের আগুনে জ্বলে ওঠেন। তারা ক্লিনিকে হামলা চালিয়ে আংশিক ভাঙচুর করার পাশাপাশি বিচারের দাবিতে সড়কে অবরোধ গড়ে তোলে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে অবরোধের প্রায় এক ঘণ্টার মাথায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। অপরদিকে ক্লিনিকের মালিক বলে পরিচয় দাতা পার্শ্ববর্তী আলুকদিয়া ঝোড়াঘাটার নূর মোহাম্মদ সটকে পড়েন। এছাড়াও ক্লিনিকটির মালিক বলে পরিচিত রামনগরের এনামুল, লক্ষ্মীপুরের আব্দুর রশীদ এবং জাহাঙ্গীর ভালাইপুর মোড়ের তেসীমানায় ফেরেনি। এদেরকে খুঁজতে থাকেন স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা।

শেষ পর্যন্ত শিশু মহুয়ার মৃতদেহ তার নিজ গ্রাম খাদিমপুরে নেয়া হয়। গতকালই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা চুয়াডাঙ্গার ক্লিনিক নার্সিং হোমগুলোতে কীভাবে অপচিকিৎসা হচ্ছে, কীভাবে মারা যাচ্ছে একের পর এক রোগী তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। গত ১০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অদূরবর্তী মা ক্লিনিকে সিজার করতে গিয়ে এক প্রসূতির আর জ্ঞানই ফেরেনি। শেষ পর্যন্ত মারা যান শেফালী নামের প্রসূতি। তিনি চুয়াডাঙ্গা কাথুলীর মনিরুলের স্ত্রী। এ ঘটনার জের কাটতে না কাটতে গত ২৬ এপ্রিল সময় হওয়ার অনেক আগে একই ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করা হয় মুন্নির শরীরে। অপূর্ণতার কারণে প্রসূতি মুন্নির সন্তান বাঁচেনি। এধরনের অপচিকিৎসায় একের পর এক অপমৃত্যুর খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও প্রতিকার মিলছে না। ফলে ক্লিনিকগুলোতে চরম অব্যবস্থাপনা ফুটে উঠছে। তারই কুফল ভোগ করতে হলো খাদিমপুরের শিশু মহুয়ার। তাকে যে মহিলা ইনজেকশন দিয়েছেন, তিনি ক্লিনিকের ঝাড়ুদার আয়া। তিনিই সেবিকা হিসেবে ইনজেকশন দিয়েছেন। ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক কে? ডিপ্লোমাধারী সেবিকাই বা কে? ঘটনার সময় তারা কোথায় ছিলেন? তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে? কে দেবে জবাব?