অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৬ বাড়িতে ডাকাতি : প্রতিরোধের মুখে বোমা নিক্ষেপ

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি খেজুরতলা গ্রামে ডাকাতদলের দীর্ঘসময় তাণ্ডব

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার খেজুরতলা গ্রামে রাতভর তাণ্ডব চালিয়েছে সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতদল। দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে  ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একই গ্রামের ৬ বাড়ি ডাকাতিকালে সোনার গয়না থেকে শুরু করে হেঁসো-কাঁচি পর্যন্ত নিয়ে গেছে। ছুঁড়েছে বোমা সাদৃশ্য বস্তু। এ ঘটনায় পুলিশ রাজু নামের এক যুবককে আটক করেছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১০-১২ জনের একটি ডাকাতদল আলমডাঙ্গা উপজেলার খেজুরতলা গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে। রাত ১১টার দিকে খেজুরতলা গ্রামের মাদরাসাপাড়ার দুলু বিশ্বাসের ছেলে শিপন বিশ্বাস (৩০) বাড়ির বাইরে প্রসাব করতে যান। ওই সময় ডাকাতদল তাকে জাপটে ধরে। শিপন বিশ্বাসের সাথে ধস্তাধস্তি করে সুবিধা করতে না পারায় ডাকাতদল তাকে উদ্দেশ্য করে একটি বোমা সাদৃশ্য বস্তু নিক্ষেপ করে। সৌভাগ্যবশত বোমাটি পেছনের গর্তের পানিতে গিয়ে পড়ে। শিপন বিশ্বাস বাড়ির অভ্যন্তরে দৌঁড়ে গেলে ডাকাতদলও তার পিছু নেয়। বাড়িতে ঢুকে শিপন বিশ্বাসের ৩ বছরের শিশুপুত্র সিয়ামের গলায় ধারালো হেঁসো ধরে গরু কেনা বাবদ জমানো ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ ঘটনার পর ডাকাতদল একই গ্রামের মাঠপাড়ায় চড়াও হয়। রাত ১টার দিকে সাকের মণ্ডলের প্রবাসী ছেলে অহিদুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। দেশি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১টি সোনার হার, নাকের বাউটি, নগদ ১০ হাজার টাকা, সাইকেল-ঘড়ি, বিদেশি লাইট হাতিয়ে নেয়। এ বাড়ি ডাকাতি শেষে পাশে অবস্থিত সাকের মণ্ডলের অপর ছেলে রাশিদুল ইসলামের বাড়ি ডাকাতি করে। এ বাড়ি থেকে নগদ মাত্র ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। অন্যকিছু না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহস্বামী রাশিদুল ইসলামকে বালিধারা দিয়ে বেদম পিটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর একই পাড়ার বারেক আলীর ছেলে জহিরুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে একইভাবে সকলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১টি সোনার চেন, নাকের তা, আংটি, রুপার তোড়া, বাইসাইকেল ও মোবাইলফোন নিয়েছে। এরপর প্রতিবেশী জাহার মণ্ডলের ছেলে নফর আলীর বাড়ির ভেতর ঢুকে একইভাবে সকলকে জিম্মি করে নগদ ৯ হাজার টাকা ও ১টি মোবাইলফোন নিয়ে গেছে। শেষে একইপাড়ার মৃত হাগু মণ্ডলের ছেলে রবিউল ইসলামের বাড়িতে ঢোকে। সকলকে দেশি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শাড়ি, লুঙ্গি, হেঁসো-কাঁচি যা পেয়েছে তাই নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ডাকাতির শিকার শিপন বিশ্বাস বলেন, তার সাথে ডাকাতদলের ধস্তাধস্তি ও ডাকাতিকালে তিনি ৪ জনকে চিনতে পেরেছেন। এরা হলো- একই গ্রামের নাসির উদ্দীনের ছেলে রাজু, ইউসুফ আলীর ছেলে ইকদুল, জান আলমের ছেলে মাসুদ ও মৃত ফারাং মণ্ডলের ছেলে সুইট। রাজুর নাম বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন। কারণ রাজু বেশ কয়েক দিন ধরে কবে গরু কিনতে যাবে তা শিপন বিশ্বাসকে জিজ্ঞেস করেছিলো। গতকাল বুধবার আলমডাঙ্গা পশুহাটে তার গরু কিনতে যাওয়ার কথা  ছিলো। গতকালই পুলিশ সন্দেহভাজন রাজুকে আটক করেছে। রাজু একই গ্রামের নাসির উদ্দীনের ছেলে। ডাকাতির শিকার শিপন বিশ্বাস যে ৪ জনকে ডাকাতিকালে চিনে ফেলেছেন বলে দাবি করেছেন, রাজু তাদের অন্যতম। আটক রাজু জানিয়েছে, শিপন বিশ্বাস মাদকব্যবসায়ী। মাদকব্যবসা বন্ধ না করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলো রাজু। সে কারণে শিপন মিথ্যা অভিযোগে তাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।

দীর্ঘদিন পর পবিত্র রমজান মাসে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটলো। এ ডাকাতির কথা জানতে পেরে সকালেই সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আলমডাঙ্গা থানার ওসি আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ডাকাতির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা গেছে। আপ্রাণ চেষ্টা চলছে গ্রেফতারের। ইতোমধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন খুব দ্রুত ডাকাতির সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এদিকে এ গণডাকাতির সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলামও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ডাকাতি ঘটনায় শিপন বিশ্বাস বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় নির্দিষ্ট করে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেছেন।