অসহায় মায়ের শেষ ভরসাও ভাসিয়ে গেলো শোক সাগরে

চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটা স্কুলছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও মোমিনপুর স্টেশনের মধ্যবর্তী পাঁচপকেট নামকস্থান থেকে দ্বিখণ্ডিত স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রেলপুলিশ মৃতদেহ উদ্ধারের সময় মন্তব্য করতে গিয়ে বলে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যুবক ট্রেনে কেটেই মারা গেছে।

মৃতদেহ প্রথমে অজ্ঞাত পরিচয়ের থাকলেও পরে জানা যায়, ট্রেনে কেটে মারা যাওয়া যুবককের নাম রাকিবুল ইসলাম রকি। ঝিনাইদহ জেলা সদরের ডাকবাংলার অদূরবর্তী মামুনশিয়ার নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। সে মামুনশিয়া গ্রামের অসহায় মা ফিরোজা খাতুনের একমাত্র ছেলে। তার পিতা ইমতিয়াজ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে যশোর নাভারন এলাকায় থাকে। গতপরশু শুক্রবার মায়ের ওপর অভিমান করে সে বাইসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর ফেরেনি। অবশেষে ট্রেনে কাটা দ্বিখণ্ডিত লাশ হয়েছে সে। গতরাতে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সামাদ ও মামা আছমত আলী মৃতদেহ গ্রহণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন। তারা বলেন, রকির বয়স যখন কয়েক মাস তখন ওর মাকে ফেলে চলে যায় পিতা। অসহায় মা খুব কষ্ট করেই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য লেখাপড়া শেখাচ্ছিলো। সবই বৃথা হয়ে গেলো। সন্তান হারানো মা ফিরোজা খাতুনকে শান্তনা দেয়ার ভাসাও যেনো খুঁজে পাচ্ছে না তার আত্মীয়-স্বজন।  

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী ঘোড়ামারা ব্রিজের নিকটস্থ পাঁচপকেট নামকস্থানের পরিবেশ অনেকটাই ভুতুড়ে। অধিকাংশ সময়ই থাকে নির্জন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে মাঠের কৃষক রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা দ্বি-খণ্ডিত লাশ দেখে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন জিআরপি ফাঁড়িতে খবর দেন। সদর থানা পুলিশও খবর পায়। দুপুর ১২টার দিকে জিআরপি লাশ উদ্ধার করে স্টেশনে নেন। ট্রেনে কেটে আনুমানিক ১৫/১৬ বছরের এক যুবক মারা গেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। উৎসুক জনতার ভিড় জমে। অপরদিকে মায়ের ওপর অভিমান করে শুক্রবার বাড়ি থেকে বের হওয়া রাকিবুলের খোঁজে অস্থির নিকটজনেরাও লাশ দেখতে এগিয়ে যান। তারাই লাশ শনাক্ত করে বলেন, মৃতদেহ স্কুলছাত্র রকির।  

এ বিষয়ে রেলওয়ের পোড়াদহ থানায় মামলা হয়েছে। রকি যে বাইসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে বের হয়েছে বলে তার বাড়ির লোকজন দাবি করেছে, সেই সাইকেলের হদিস মেলেনি। পাঁচপকেটের মতো নির্জন স্থানে ট্রেনে কেটে আত্মহত্যা নাকি আড়ালে অন্য কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে তা স্পষ্ট না হলেও অধিকাংশেরই ধারণা, স্কুলছাত্র টেনে কেটেই মারা গেছে।