অর্পিত সম্পত্তিতে ৫ যুগ ধরে বসবাসকারী একটি পরিবারকে উচ্ছেদ !

জেহালা বাজারে বসতঘর ভেঙে অর্পিত সম্পত্তিতে ৫ যুগ ধরে বসবাসকারী একটি পরিবারকে উচ্ছেদ ও বাকি কয়েক পরিবারকে উঠে যেতে নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ এক ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার জেহালা বাজারে বসতঘর ভেঙে অর্পিত সম্পত্তি লিজসূত্রে প্রায় ৫ যুগ ধরে বসবাসকারী একটি পরিবারকে উচ্ছেদ ও বাকি কয়েকটি পরিবারকে উঠে যেতে নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেহালা ইউপি সদস্য হিরালাল দোবের বিরুদ্ধে। ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী মুন্সিগঞ্জের শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার হয়ে তিনি অবৈধভাবে ওই দরিদ্র পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙচুর ও অন্যদের উঠে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে নির্যাতিত পরিবারগুলোর দাবি। এলাকাবাসীর পরামর্শে গতকাল ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় নির্যাতিত পরিবারের মহিলারা আলমডাঙ্গায় যান সাংবাদিকদের খোঁজ করেন। সাংবাদিকদের নিকট এ অভিযোগ জানানোর সময় তাদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা বাজারের মোট ২ দাগে মোট ১১ শতক অর্পিত জমিতে ৪-৫টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। পরিবারগুলোর দাবি পাকিস্তান শাসনামল থেকে অর্থাৎ প্রায় ৫ যুগ ধরে তারা বংশানুক্রমে লিজসূত্রে ওই জমিতে বসবাস করছেন। এলাকার ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী জেহালা বাজারের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর আগরওয়ালা সম্প্রতি ওই সরকারি খাসজমির নিকটে প্রায় ২০ শতক জমি ক্রয় করেছেন। সেই পুকুর ভরাট করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা থাকতে পারে মন্তব্য করে অভিযোগকারীরা বলেছেন, সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা সৃষ্টি করতেই শ্যামসুন্দর আগরওয়ালা বেশ কয়েক বছর ধরে তাদেরকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা করে আসছেন। তারই অংশ হিসেবে গতকাল জেহালা ইউপি মেম্বার হিরালাল দোবে ও শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার কর্মচারী আনিস তাদের বাড়িতে যান। রাজমিস্ত্রি ইকতার আলীর স্ত্রী রাণী খাতুন বলেন, হিরালাল দোবে মেম্বার ও আনিস তাদের বসত বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, তাদের একটা বিয়েযোগ্য মেয়ে আছে। তাকে কোথায় রাখবেন? কে দেবেন নিরাপত্তা? এই চিন্তাটাই এখন তাদের পরিবারের বড় সমস্যা। এছাড়া ওই লিজের জমিতে বসবাসরত স মিল শ্রমিক তৈয়ব আলীর স্ত্রী সাইদা খাতুন, দিনমজুর শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন, মৃত আলমঙ্গীর আলীর বিধবা স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের পিয়ন দলিলুর রহমানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন অভিযোগ তুলে বলেন, শুধু একটি বসতবাড়ি ভেঙে নিয়ে গিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি হিরালাল মেম্বার। বাকি পরিবারদেরকে ১ সপ্তার মধ্যে বসতঘর ভেঙে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেছে। তা না হলে তিনি মেশিন নিয়ে গিয়ে ঘরিবাড়ি ভেঙে দেবেন। সেই মেশিনভাড়া ঘণ্টায় ১২ হাজার টাকা। মেশিন ভাড়ার টাকাও অসহায় পরিবারগুলোকে গুনতে হবে। ভূমিহীন এই পরিবারগুলোর দাবি- এখান থেকে উচ্ছেদ করা হলে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন?
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হিরালাল দোবে বলেন, ওই ৮ শতক জমি শ্রী শ্রী হরিবাসর নাথ মন্দিরের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাপজোঁক করে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছে। কিন্তু ওই সম্পত্তিতে বসবাসকারীরা সেখান থেকে উঠতে চাচ্ছে না। তারা প্রথমে ৩ মাস সময় নিয়েছিলো মন্দির কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে। এমনকি সেখান থেকে উঠে যাওয়ার সত্বে অনেক টাকাও নিয়েছে। তারপরও ওঠেনি। ইতঃপূর্বে পুলিশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেছিলো বলে দাবি করে হিরালাল মেম্বার। সরকারিভাবে পুলিশকে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা, বা আদালত সে নির্দেশ দেবেন। কিন্তু আপনি কীভাবে উচ্ছেদ করছেন প্রশ্ন করলে তিনি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বলেন।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী বজলুল হক বলেন, ওই ১১ শতক ভিপি জমির মধ্যে ৮ শতক জমি শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার নামে আরএস রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আজও কোন রেকর্ড সংশোধনী মামলা করা হয়নি বলেও তিনি জানান। গত বছর পর্যন্ত তাদেরকে লিজ প্রদান করা হলেও এ বছর কেন লিজ প্রদান করা হচ্ছে না জিজ্ঞেস করলে লিজের বিষয়টি তার এখতিয়ারভুক্ত নয় বলে দাবি করেন।