অর্থনীতিবিদদের অভিমত : নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায়ই বড় চ্যালেঞ্জ

 

স্টাফ রিপোর্টার: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নকে আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষ করে রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন তারা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার যে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় করার পরিকল্পনা করেছে, তা বাস্তবে অর্জন করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চলতি বছরের রাজস্ব আদায়ের তুলনায় অন্তত ৩৫ শতাংশ আয় বাড়াতে হবে। যা বাস্তবিক অর্থে সহজ নয়। তার ওপর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ই বড় চ্যালেঞ্জ।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, এমনিতেই আগামী বছরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে তা চলতি বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তার ওপর সরকার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। তাই রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনতে না পারলে শেষ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যয়ের দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে সংস্থাগুলো আমাদের প্রকল্প বা রাজস্ব ব্যয়ের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে তাদের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। তাই তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে বাজেট বাস্তবায়নই হবে এবারের চ্যালেঞ্জ।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের আয় ধরা হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত এটাও আদায় হয় কি-না সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অথচ সংশোধিত বাজেটের তুলনায়ও আগামী অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। অথচ এই পরিমাণ রাজস্ব আদায় কীভাবে করা হবে তার পথগুলো ব্যাপক নয়। তাই রাজস্ব আদায় নিয়েই বড় সংশয়। তার মধ্যে সরকার ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পশ্চাত্পদতা অবলম্বন করেছে। এ অবস্থায় আগামীতে এটা কবে বাস্তবায়ন হবে তা বুঝা যাচ্ছে না।

সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, এ বাজেটে তেমন নতুনত্ব নেই। এ বাজেটের মাধ্যমে ধনীরা আরো ধনী হবে, দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হবে। কারণ এনবিআর বড় অঙ্কের প্রত্যক্ষ কর আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বেশি আদায় করা হবে পরোক্ষ কর। এ বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং জায়গা হলো রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি। কারণ এনবিআরের এত বড় পরিমাণের কর আদায়ের সক্ষমতা নেই। ড. মাহবুব আলী বলেন, আমরা প্রতি বছর যে বড় অঙ্কের ঘাটতি বাজেট করছি। এটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের সমতামূলক বাজেট করা যায় কি-না তা ভেবে দরকার। তাই বাজেটে ভর্তুকির টাকা অনুন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় করার বিষয়টিও ভাবা প্রয়োজন। এদিকে বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এটা কীভাবে হবে তা বুঝা যাচ্ছে না। কারণ বর্তমানে খাদ্য বহির্ভূত পণ্য ও সেবার যে দাম বেড়েছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেতন বেড়েছে তাতে মূল্যস্ফীতির হার এত কমার কথা নয়।