অভিযুক্ত ধর্ষক কাশেম গ্রেফতার : সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

আলমডাঙ্গায় পিতার বন্ধু কর্তৃক ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ ও জোরপূর্বক গর্ভপাত

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানো মামলার প্রধান আসামি কাশেম আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার ভোরে আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত কাশেম আলী তিয়রবিলা গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছেলে। এদিকে, উদ্ধারকৃত নবজাতক শিশুর লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত শেষে নানার গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভূমিষ্ঠ শিশুকন্যার লাশ উদ্ধার ও তড়িৎ পদক্ষেপে আসামি গ্রেফতারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেকেই প্রকাশ্যে পুলিশের প্রশংসা করেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার তিয়রবিলা গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে দফায় দফায় ধর্ষণ করে পিতার বন্ধু প্রভাবশালী কাশেম আলী। ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত শুক্রবার জোরপূর্বক স্কুলছাত্রীর গর্ভপাত ঘটনায় প্রভাবশালী অভিযুক্ত ধর্ষক কাশেম আলী। আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ জানান, গতকাল বুধবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি দল কায়েতপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাশেম আলীকে গ্রেফতার করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কলিমুল্লাহ ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে অকপটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের কথা ও ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর কথা স্বীকার করে। গতকালই তাকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আলমডাঙ্গা আমলি আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে, শিশুকন্যার পিতৃত্ব প্রমাণের জন্য উদ্ধারকৃত সদ্যপ্রসূত কন্যাশিশুর লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত শেষে নানার (ধর্ষিতার বাপ) হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে নানা ওই শিশুর লাশ নেন। বাদ আছর তিয়রবিলায় দাফন করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই একরামুল জানিয়েছেন, শিশুটির সংগৃহীত ডিএনএ নমুনা ঢাকা মালিবাগে অবস্থিত পুলিশের (সিআইডি) চিফ ডিএনএ এনালাইসিস সেন্টারে পাঠাতে হবে। তবে সেটার জন্য বেশকিছু সময় লাগবে। আদালতের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামি কাশেম আলীর ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করে অনুরূপে চিফ ডিএনএ এনালাইসিস সেন্টারে পাঠাতে হবে ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গায় দিনমজুরের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া নাবালিকাকে বাপের ধনাঢ্য বন্ধু কাশেম আলী কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনায় গত ১২মার্চ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। গর্ভপাত ঘটানোর পর বাড়িতে আটকে রাখা মুমূর্ষু শিশুকন্যাকে পুলিশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ একদিকে ধর্ষককে গ্রেফতার ও অন্যদিকে ভূমিষ্ঠ সন্তানকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক অভিযান অব্যাহত রাখে। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই একরামুল হরিণাকু-ু উপজেলা ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ছুটে বেড়িয়েছেন। সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই একরামুল জানান, গত ৮ মার্চ ধর্ষক কাশেম ও তার ভাই মনিরুজ্জামান ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর গর্ভপাত ঘটানোর জন্য তাকে বাড়ি থেকে হরিণাকু-ু শহর ও ঝিনাইদহ শহরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন ক্লিনিকে ধর্ণা দেয় গর্ভপাত ঘটানোর জন্য। কিন্তু ৭-৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে কেউ গর্ভপাত ঘটানোর মতো ঝুঁকি নিতে সম্মত হয়নি। ওই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে ধর্ষক কাশেম আলী ও তার বড় ভাই মনিরুজ্জামান অজ্ঞাত কোনো কবিরাজের নিকট থেকে অথবা অন্য কারো পরামর্শে গর্ভপাত ঘটানোর ওষুধ কিনে ধর্ষিতাকে খাওয়ায়। ৯ মার্চ গভীররাতে পুনরায় ধর্ষিতাকে তারা হরিণাকু-ু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত হতে না হতেই ধর্ষিতার প্রসব বেদনা ওঠে। সেখানে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুকে একটি গামলার ভেতর রেখে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ওই সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তান জীবিত উদ্ধার করে গত ১০ মার্চ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. জামিলুর রশীদ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠান উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে শিশুটি মারা যায়। মৃত্যুর পর শিশুটিকে ১১ মার্চ আবার হরিণাকু-ু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরিয়ে আনা হয়।
এদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই একরামুল সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গতকাল ১৩ মার্চ বিকেলে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের এ কর্মতৎপরতা ও সাফল্যে এলাকার অনেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।