অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেয়ার নীতির সমালোচনায় জাতিসংঘ

 

স্টাফ রিপোর্টার: সমুদ্রে ভেসে থাকা অভিবাসীদের তীরে ভিড়তে না দিয়ে সমুদ্র ফেরত পাঠানোর নীতির সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন দুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নিজ নিজ দেশের সীমান্ত ও বন্দর খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।  তিনি বলেন, বিপদগ্রস্ত নৌকাগুলো উদ্ধার করতে এসব দেশের একটি দায় রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তার মুখপাত্রের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দামান সাগর ও মালাক্কা প্রণালীতে যে সঙ্কট ঘনিয়ে উঠেছে তা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বিগ্ন। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ পাচারকারীদের নৌকায় আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েকটি দেশ তাদের সীমানায় এসব নৌকা ঢুকতে বাধা দিচ্ছে বলে প্রতিবেদন এসেছে, যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। সাগরে বিপদগ্রস্তদের সহায়তা করতে এবং যারা আসছে ‘তাদের জোর করে ফিরিয়ে না দেয়ার নীতি’ সমুন্নত রাখতেও ওই অঞ্চলের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বান কি-মুন।

অন্যদিকে, মাঝ সাগরে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ভাসতে থাকা প্রায় আট হাজার অভিবাসীর জীবন রক্ষায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশের সরকারের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার জাইদ রাদ আল হোসেইন। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া কিছু সংখ্যক  অভিবাসীকে তীরে নামতে দেয়ায় তিনি এই দুই দেশের প্রশংসা করেন। কিন্তু একই সাথে তারা যে অভিবাসীদের সাগরে ঠেলে দিচ্ছে তাতে এদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এদের জীবনকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে না দিয়ে আমাদের বরং উচিত তাদের জীবন রক্ষার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়া। তিনি আরো বলেন, এ অভিবাসীরা যেখান থেকে যেভাবেই তাদের সীমান্তে আসুক না কেন তাদের অধিকারকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। এদেরকে অপরাধী বলে গণ্য করা এবং কারাবন্দী করা সমস্যার সমাধান নয়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গত তিন মাসে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা দেশ ছেড়েছে। যাদের মধ্যে প্রায় তিনশো জন যাত্রাপথে মারা গেছে। সমস্যার আঞ্চলিক সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সাগরের ভাসমান মানুষের জীবন বাঁচাতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস অফিসের পরিচালক জেফ রাথকি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উচিত তাদের তীরবর্তী ভেসে থাকা মানুষদের নামার সুযোগ দেয়া। তিনি জানান, সাগরে ভেসে থাকা এসব মানুষদের উদ্ধারে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্যোগ নেই। এটি একটি আঞ্চলিক ইস্যু। এ ইস্যুর সমাধানে দ্রুত আঞ্চলিক পদক্ষেপ দরকার। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা এ অঞ্চলের মানুষদের একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানায়। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সীমান্তের কাছে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে মানব পাচারকারীদের কিছু ক্যাম্প ও অভিবাসীদের গণকবর আবিষ্কারের পরপর বিষয়টি নিয়ে তোলপার শুরু হয়। থাই সরকার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পর কয়েকজন পাচারকারী ও অবৈধ অভিবাসী আটক হয়েছেন। এ ঘটনার পর মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সরকারও তাদের সমুদ্রসীমায় নজরদারি বাড়িয়েছে। যে কারণে সাগরে ভেসে থাকা প্রায় আট হাজার অভিবাসী এখন কোনো তীরে ভিড়তে পারছে না। এসব নৌকায় পর্যাপ্ত খাবার ও পানি না থাকায় তাদের জীবন এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। থাইল্যান্ডের জলসীমায় একটি নৌকাতে যাত্রীরা মূত্র পান করে বেঁচে আছে বলে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বলছে, ছয় হাজারেরও বেশি অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত অবৈধ অভিবাসী এখন উদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন।