অভিজিত হত্যার দায় নিলো আল-কায়েদা

স্টাফ রিপোর্টার: লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিত রায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। শনিবার জঙ্গি সংগঠনটি পরিচালিত একটি জিহাদিস্ট ফোরামে এ হত্যার দায় স্বীকার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওটিতে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার প্রধান অসীম উমর দাবি করেন, তার নির্দেশে সংগঠনের কর্মীরা অভিজিত্ রায়কে হত্যা করেছে। অনলাইনে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এমন একটি গোয়েন্দা সংস্থা (সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট এন্টিটিস-সাইট) ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

এদিকে অভিজিত রায় হত্যার বিষয়টি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যায় উসকানিদাতা হিসেবে হিযবুত তাহরির সদস্য শফিউর রহমান ফারাবীকে ৱ্যাব গ্রেফতার করে। ডিবি ফারাবীকে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) নামে আল-কায়েদার অনুসারী একটি ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এবিটির একটি স্লিপার সেল সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। ওই সেলের সদস্যদের নাম-পরিচয়ও তারা পেয়েছেন। তবে গ্রেফতারের আগে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে তাদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

ৱ্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে.কর্নেল আবুল কালাম আজাদ গতকাল বলেন, অভিজিতকে আল-কায়েদার নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে-এমন বিষয়টি এখনও তদন্তে পাওয়া যায়নি। তবে ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনই অভিজিতকে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের আড়াল করতে কিংবা কেউ এটি থেকে সুবিধা নিতে আল-কায়েদার নামে ভিডিও বার্তা প্রচার করতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলা থেকে রাত ৯টার দিকে ফেরার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ড. অভিজিত রায়। দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকেও কুপিয়ে আহত করে। রাফিদা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলেই নিহত হন অভিজিত রায়। ঘটনাটি সারা দুনিয়ায় আলোচিত হয়। ঘটনার দিনই লন্ডন থেকে করা এক টুইটবার্তায় দায় স্বীকার করে নেয় আনসার বাংলা-৭ নামে একটি সংগঠন। ঘটনা তদন্তে দেশে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-এফবিআই। অপরদিকে পুলিশের সামনেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি খুঁজে পায়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিজিত হত্যাকাণ্ডের পর গোয়েন্দা পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় একুশে বইমেলা ও টিএসসি এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। তবে ফুটেজে বইমেলাতে একবারের জন্য অভিজিতক দেখা গেলেও সেখানে তার পিছু নেয়া কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া বইমেলায় অভিজিতের সাথে বুয়েট শিক্ষক ফারসীমসহ যাদের সাথে বৈঠক হয়েছিলো, তাদের সম্পর্কেও গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়েছে। এমনকি ফারসীমকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তবে তাদের কাছে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত কোনও তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। এছাড়া ঘটনার তিন দিনের মাথায় ৱ্যাব ফারাবী শফিউর রহমান নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করে। সে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিজিতক হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। ফারাবীকে গোয়েন্দা পুলিশ দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু ফারাবীও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, অভিজিতের হত্যাকাণ্ড সমর্থন করলেও হত্যাকাণ্ডে কারা অংশ নিয়েছিলো ফারাবী তা জানাতে পারেনি।