অভিজিতের খুনিদের ৭ ভিডিও প্রকাশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় বছর পর সন্দেহভাজন খুনিদের ৭টি ভিডিও প্রকাশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এসব ভিডিওতে অভিজিতের অনুসরণকারী সন্দেহভাজন খুনিদের শনাক্ত করে তাদের ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সবগুলো ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৬ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে বইমেলায় প্রবেশের আগে থেকেই অনুসরণ করেছে। এদের মধ্যে শরীফ নামে এক জঙ্গি পুলিশের ক্রসফায়ারে মারা গেছে। অন্য ৫ জনের নাম-পরিচয় জানে না পুলিশ। তাদের শনাক্ত ও ধরিয়ে দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বেরিয়ে আসার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন অভিজিৎ রায়। দুর্বৃত্তদের ধারালো চাপাতির আঘাতে অভিজিতের স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন। অভিজিৎ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। এ ঘটনায় ফারাবীসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আর শরীফ নামে একজন ক্রসফায়ারে মারা যায়। ডিএমপি কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার পরপরই তারা একুশে বইমেলা উপলক্ষে স্থাপন করা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা খুনিদের চিহ্নিত করেছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানতে পারেননি। পরিচয় জানার জন্য সহযোগিতা চেয়েছে ডিএমপি।

ফুটেজে দেখা যায়, অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ বইমেলায় যখন ঘুরছিলেন, তখন তাদের অনুসরণ করছিলো কয়েকজন তরুণ। পৃথক সিসিটিভি ফুটেজে আলাদা তরুণদের দেখা গেছে। প্রথম ফুটেজে দেখা যায়, অভিজিৎ ও বন্যার পেছনে এক তরুণ মোবাইল টিপতে টিপতে অনুসরণ করছে। রাত তখন ৮টা ৪৪ মিনিট। পাশে ব্যাগ কাঁধে এক তরুণকে যেতে দেখা যায়। এছাড়া তার পাশে স্বাস্থ্যবান এক তরুণও ছিল। যার চোখে চশমা দেখা গেছে। দ্বিতীয় ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে অভিজিৎ ও বন্যা বইমেলার গেট দিয়ে বের হয়ে আসছেন। তাদের পেছনে-পেছনে ওই ৩ জনকেই দেখা যাচ্ছে। সন্দেহভাজন খুনিরা বাইরে বেরিয়ে আসার সময় মোবাইলে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছিলো। তারা অভিজিতের খুব কাছাকাছি থেকেই অনুসরণ করছিলো।

আরেক ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সন্দেহভাজন এক তরুণ বইমেলার মূল ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সময় তখন বিকেল ৪টা ১ মিনিট। তার হাতেও মোবাইল। গায়ে শর্ট পাঞ্জাবি রয়েছে। মুখে হালকা দাড়িওয়ালা এই তরুণকে মেলার ফটকের কংক্রিটের চেয়ারে বসে থাকতেও দেখা যায়। অন্য এক ফুটেজে দেখা যায়, আরেক তরুণের সঙ্গে তিনি মেলার ভেতরে প্রবেশ করছেন। প্রায় একই সময়ে এক তরুণ সাইকেল নিয়ে মেলায় প্রবেশ করে। বিকেল ৪টা ২৪ মিনিটে ওই তরুণকে ভেতর থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে সাদা শার্ট গায়ে আরেক তরুণকে মেলা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এই যুবকের গালেও হালকা দাড়ি রয়েছে। সঙ্গে পাতলা গড়নের একজনকেও দেখা যায়।

উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, অভিজিৎ রায় মেলায় ঢোকার আগে থেকেই সংঘবদ্ধ খুনি চক্র মেলার গেটে গিয়ে অবস্থান করছিল। অভিজিৎ রায় মেলায় ঢোকার পর থেকেই তাকে অনুসরণ করতে থাকে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে। জানা যায়, মেলা থেকে বেরিয়ে আসার পর চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়ো অভিজিৎকে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ভিডিও ফুটেজে অন্তত ৬ তরুণকে দেখা গেছে। যারা সবাই অভিজিৎকে অনুসরণ করছিলো। হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলো দুই তরুণ। অন্যরা আশেপাশেই অবস্থান করছিলো বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ভিডিও ফুটেজে যার কাঁধে ব্যাগ ছিলো সে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলো বলে তাদের ধারণা। কারণ ব্যাগের ভেতর থেকেই চাপাতি বের করে অভিজিতের ওপর আক্রমণ করা হয়।