অবৈধ সরকার গায়ের জোরে বেশি দিন থাকতে পারবে না

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সব কূল হারিয়েছে মন্তব্য করে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিএনপির আন্দোলনে কোনো ভুল নেই। বিএনপি কোনো দিন সহিংসতা চায়নি বরং শান্তি স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন তার বিজয়ের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের জেদ এক হাস্যকর প্রহসনে পর্যবসিত হয়েছে। ১৫৩ আসনে কোনো নির্বাচনই করতে পারেনি সরকার। বাকি আসনগুলোতে ভোটারবর্জিত জঘন্য কারসাজি ও জালিয়াতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তারা কতোটা জনবিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশের জনগণ বহুমুখি শত অপপ্রচারেও বিভ্রান্ত হয়নি। তারা ওই প্রহসন বর্জন করে সরকারকে সম্পূর্ণ অবৈধ করে দিয়েছে। এখনকার সরকার অগণতান্ত্রিক, জনগণের অনুমোদনহীন এবং কারসাজি ও গায়ের জোরের এক অবৈধ সরকার। গতকাল বিকাল চারটায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত নানা ঘটনাপ্রবাহের পরও সরকারের প্রতি সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে বিরোধী জোট নেতা বলেন, বিএনপি মনে করে আলোচনাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। সংলাপের ফলপ্রসূ করতে ৫টি উদ্যোগ নেয়ার দাবিও জানান তিনি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন মৃত দাবি করে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন- কারসাজি, সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত ও অপপ্রচার- এই চার অস্ত্রে গণতন্ত্রকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা হয়েছে। তবে এগুলো শিগগিরই অকার্যকর হয়ে পড়বে। জনগণের ভোটে জনগণের সরকার কায়েম হবে। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া ২৫ মিনিটের বক্তব্যে ভবিষ্যত সরকার পরিচালনায় বিএনপির ২০ দফা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতা দমন, প্রতিবেশী দেশের সাথে বন্ধুত্ব জোরদার, জাতীয় ও আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করার নীতি গ্রহণ, নির্বাচন পদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার, ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা স্থায়ী রূপরেখা নির্ণয়, বিরোধী দলকে গুরুত্ব ও মর্যাদা দেয়া, সমঝোতার ভিত্তিতে হানাহানি ও সংঘাতের রাজনীতির অবসান, বিচার বিভাগ ও সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহকে দলীয়করণমুক্ত রাখা, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম জোরদার, সম্মিলিতভাবে কর্মমুখর সমাজ গঠনসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার বিষয়গুলোকে জোর দেয়া হয়। খালেদা জিয়া দেশবাসীকে কথা দেন, আওয়ামী লীগের অপকর্মের পুনরাবৃত্তি বা অনুসরণ করবে না বিএনপি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৪০ ভাগ ভোট কাস্টের ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে ৫ ভাগের বেশি পড়েনি বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার এ দাবির পক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আগে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি ডকুমেন্টারিও দেখানো হয়। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে গত ৫ জানুয়ারি দেশবাসী নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। এজন্য দেশের মানুষকে আগামী ২০ জানুয়ারি সারাদেশে গণসমাবেশ ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানোর ঘোষণা দেন। গণতন্ত্র হত্যা ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামী ২৯ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ দিবস পালন ও সারাদেশে ওই দিন কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ও দলের সিনিয়র নেতাসহ খালেদা জিয়া সারাদেশে বিভিন্ন অঞ্চল সফরের ঘোষণা দেন। ৫ জানুয়ারি পরবর্তী দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারি দলকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, সকলের আগে প্রয়োজন সংখ্যালঘুদের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা বিধান। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে। এখন পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামীতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং প্রয়োজনবোধে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে সকল অপরাধীকে চিহ্নিতকরণ ও শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সেই সাথে তিনি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত প্রতিটি এলাকায় ১৮ দলের নেতাকর্মী ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

১৮ দলের নতুন কর্মসূচি: খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন বর্জনের মধ্যদিয়ে যে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন সে জন্য দেশের মানুষকে আমরা আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাবো। ওই দিন সারাদেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে গণসমাবেশ ও শোভাযাত্রা হবে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ হবে সোহরাওরার্দী উদ্যানে। এর আগে ১৮ জানুয়ারি স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালিত হবে সারাদেশে। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে হবে আলোচনাসভা। গণতন্ত্র হত্যা ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামী ২৯ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ দিবস পালন করা হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল হবে। আমাদের নেতৃবৃন্দ এবং আমি নিজেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করবো।